করোনা পরিস্থিতিতে অনেকটা আমেজহীনভাবেই পালিত হলো বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় তিথি শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা। এ তিথিতে ভগবান বুদ্ধ দেবলোক থেকে সাংকশ্য নগরে অবতরণ করেছিলেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে শুরু হওয়া ভিক্ষুদের ত্রৈমাসিক বর্ষাব্রত আশ্বিনী পূর্ণিমা বা প্রবারণা পূর্ণিমার এই দিনে সম্পন্ন হয়। এ জন্যই দিবসটি বৌদ্ধদের কাছে একটি স্মরণীয়–বরণীয়, আনন্দ ও উৎসবমুখর দিন হিসেবে পরিগণিত। তাৎপর্যময় দিনটি পালনে গতকাল ভোর থেকে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে দেশের বৌদ্ধ সমপ্রদায়। সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে দিনটি পালন করা হয়। পুণ্যময় এই তিথিকে ঘিরে নগরীর বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের ভিড় দেখা গেছে। সকাল থেকে বিহারের ধর্মীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয় শিশু–কিশোর, তরুণ–তরুণীসহ আবাল বৃদ্ধবণিতা। বৌদ্ধ বিহারগুলো রূপ নেয় বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের মিলন মেলায়। ধর্মীয় বিভিন্ন কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যা নামতেই পাড়ায়–পাড়ায়, বিহারে–বিহারে ফানুস উড়ানোতে মেতে উঠে কিশোর–যুবকরা। যোগ দেয় আবাল–বৃদ্ধ বণিতা। ফানুসে ছেয়ে যায় সন্ধ্যার আকাশ। এর আগে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির আকুলতায় বিশেষ প্রার্থনাও চলে বিহারে বিহারে। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে অতীতের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার ভিড় কম দেখা গেছে বিহারগুলোতে।
নগরীর নন্দনকাননস্থ চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার, কাতালগঞ্জ নবপন্ডিত বিহার, দেব পাহাড় পূর্ণাচার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, মোগলটুলী শাক্যমুণি বিহার, চান্দগাঁও সার্বজনীন বিহার, চান্দগাঁও শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রাম বন্দর বৌদ্ধ বিহার, হালিশহর নৈরনী বুদ্ধ বিহার, পাথরঘাটা মহাবোধি বিহার, বাথুয়া জ্ঞানোদয় বিহার ছাড়াও পটিয়া, বোয়ালখালী, কদুরখীল, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, মীরসরাই, বাঁশখালী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজারসহ দেশের সকল বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়। ভোরে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরুর পর সূত্র পাঠ, সকালে বুদ্ধপূজা, ভিক্ষুসংঘকে পিন্ডদান, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ, দুপুরে ধর্মালোচনা ও প্রবারণা পূর্ণিমার তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা ছাড়াও সন্ধ্যায় প্রদীপ পূজা, বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনার পাশাপাশি ফানুস উড়ানোর মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।