বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপিত হয়েছে। এতে বক্তারা রাসুলের (দ.) আদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা ওপরও জোর দেন।
সিভাসু : চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু) পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর ২ দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে ছিল পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, হামদ ও নাত, রসুলের (দ.)জীবনীর উপর বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি এবং স্বরচিত কবিতা ও কুইজ প্রতিযোগিতা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর সিভাসু অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন মাওলানা রহিম উদ্দিন। এছাড়া সিভাসুর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. কামাল বক্তব্য রাখেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিভাসুর পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রাশেদুল আলম।
অনুষ্ঠানে সিভাসুর বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শেষে ইসলামি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বেতাগী আনজুমানে রহমানিয়া : রাঙ্গুনিয়া বেতাগী আনজুমানে রহমানিয়া ও দরবারে বেতাগী আস্তানা শরিফের উদ্যোগে গত মঙ্গলবার জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুলুসে নেতৃত্ব দেন দরবারের সাজ্জাদানশীন শাহসূফি মুহাম্মদ গোলামুর রহমান আশরফ শাহ। দরবার থেকে জশনে জুলুস শুরু হয়ে কদলপুরস্থ সুলতানুল আউলিয়া হযরত শাহসুফি আশরফ শাহ বলখি (রহ) মাজার জিয়ারত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
রাতে বেতাগী রহমানিয়া জামেউল উলুম মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় মাহফিল। এতে সভাপতির বক্তব্যে আল্লামা আশরফ শাহ বলেন, যুগে যুগে দেশে দেশে সাড়ম্বরে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বান্দার প্রতি আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশই হচ্ছে জশনে জুলুস। তিনি বলেন, জুলুসে ও মাজার শরিফে আজ দুর্বৃত্তরা হামলা করছে। ওলী বুজুর্গদের মাজারগুলো আমাদের চেতনা, ভালোবাসা ও অস্তিত্বের প্রতীক। বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে বাঁচতে সুন্নি মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি মাজারসহ সুন্নি স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান এবং হামলায় জড়িত দুর্বৃত্তদের কঠোর শাস্তি দিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
আলোচনায় অংশ নেন অধ্যক্ষ ইলিয়াস নূরী, উপাধ্যক্ষ জসিম উদ্দিন আবেদী, জিয়াউর রহমান আহমদ উল্লাহ আবু শাহ, মাহবুবুর রহমান ছফিউল্লাহ, ওবাইদুর রহমান, শায়ের মুহাম্মদ ইসহাক, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বাবর, মাহফুজুল হক, হাবিবুর রহমান ফারুক, আরিফুর রহমান রাশেদ, মুহাম্মদ হাসান, মুহাম্মদ হোসাইন, জামাল উদ্দিন আশরাফী, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রমুখ। শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি কল্যাণ কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন আল্লামা মুহাম্মদ গোলামুর রহমান আশরফ শাহ।
চট্টগ্রাম শিশু একাডেমি : বাংলাদেশ শিশু একাডেমি চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উদ্যোগে পবিত্র ঈদ–ই মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন উপলক্ষে হামদ, নাত ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল গত ১৬ সেপ্টেম্বর সোমবার একাডেমি পরিচালিত হামজারবাগস্থ শিশু বিকাশ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। শিশু একাডেমির জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মোছলেহ্ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘরের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমান। শেষে পবিত্র ঈদ–ই মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সবশেষে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনায় দোয়া–মুনাজাত করা হয়।
উরকিরচর জনতা সংঘ : রাউজান প্রতিনিধি জানান, উরকিরচর জনতা সংঘের ৩ দিনব্যাপী ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) সম্পন্ন হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর ৩ দিনব্যাপী উরকিরচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত মাহফিলের কর্মসূচিতে জশনে জুলুছ, অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, কুইজ প্রতিযোগিতা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক শিশু কিশোর নামাজ, ক্লাব সম্মাননা প্রদান, পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল। সমাপনী দিনে সভাপতিত্ব করেন উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক হাজী এইচ এম হারুনুর রশিদ। মাহফিল পরিচালনা করেন সদস্য সচিব মো. শফিউল আজম। অতিথি ছিলেন মুফতি আবুল কাসেম ফজলুল হক, আল্লামা অছিউর রহমান আল কাদেরী, মুফতি মোকারাম বারী, হাসান রেজা আল কাদেরী, মুফতি মাসুদ নদভী, ফখরুদ্দিন আলকাদেরী, গাজী শফিউল আলম নিজামী। বক্তব্য রাখেন আবু তাহের সওদাগর, মাস্টার নুরুন নবী, সাইফুদ্দিন আকতারী প্রমুখ।
বায়তুশ শরফ : বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশের উদ্যোগে ৫ দিনব্যাপী পবিত্র মিলাদুন্নবী (দ.) উদযাপন উপলক্ষে ধনিয়ালাপাড়া বায়তুশ কমপ্লেঙ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানমালার চতুর্থ দিবসে গুণীজন সংবর্ধনা গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়্ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাহবারে বায়তুশ শরফ আবদুল হাই নদভী বলেন, দেশে জ্ঞানীর সংখ্যা বাড়লেও গুণীর সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, যা দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত। তিনি বলেন, সমাজের গুণীজনদের যথাযথ মূল্যায়ন ও সম্মাননা জ্ঞাপনের মাধ্যমে সমাজে আরো গুণীজনের জন্মের পথ প্রশস্ত করা হয় এবং এতে দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়। তিনি বলেন, জ্ঞানীগুণীদের সম্মান ও মযার্দা প্রদানের পীঠস্থান বায়তুশ শরফ।
সংবর্ধিত ও বায়তুশ শরফ স্বর্ণপদক প্রাপ্তরা হলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকি নদভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান, ইসলামী ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, কবি আল্লামা মুহিব খান। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদ সেক্রেটারি জেনারেল হাফেজ মোহাম্মদ,হাফেজ মোহাম্মদ আমান উল্লাহ।
বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ আবু সালেহ মুহাম্মদ ছলিমুল্লাহ, মাওলানা মামুনুর রশীদ নুরী, মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড. মুহাম্মদ ওয়ালি উল্লাহ মুঈন। সমাপনী দিবসে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাদ মাগরিব অনুষ্ঠিত হয় আজিমুশশান মাহফিল।