আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের জেলা স্তরের যে সাংগঠনিক কমিটিগুলো রয়েছে, তার মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যতম শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বরাবরই তার সাংগঠনিক সক্ষমতা দেখিয়েছে এবং যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে দলের শক্তিশালী ভিত্তিকে সুদৃঢ রেখেছে। এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় নবীন–প্রবীণের সমন্বয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে।
গতকাল রোববার দুপুরে নগরীর কাজির দেউড়িতে সেনা কল্যাণ কনভেনশন হলে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মহানগর আওয়ামী লীগ ও তার আওতাধীন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত যে সকল ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি গঠন হয়নি জুলাই মাসের মধ্যে অবশ্যই করে ফেলতে হবে। আগস্ট মাস যেহেতু শোকের মাস, এ সময় আওয়ামী লীগের কোনো স্তরের সম্মেলন ও কমিটি গঠনের অবকাশ নেই। সেপ্টেম্বর মাসকে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি পর্ব হিসেবে ধরে নিয়ে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী অক্টোবর মাসে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে আড়ম্ভরপূর্ণভাবে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সম্মেলন নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে চাইলে হানিফ বলেন, যেগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, সেগুলো নিয়ে তো আর কথা নেই। যেখানে সমস্যা আছে, সেগুলো বসে ঠিক করতে হবে। কোনো অভিযোগ যদি থাকে সেগুলো অবশ্যই নিষ্পত্তি করা হবে। আগামী ২২ মে মহানগর আওয়ামী লীগ বসে এই ব্যাপারে সার্বিক প্রস্তুতি নেবে।
নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যক্তির পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়টি কখনো মুখ্য হতে পারে না। নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার মধ্যেই হওয়া উচিত। সংগঠনের বিভিন্ন ধাপ ও স্তরগুলোতে সমঝোতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে নেতৃত্ব বাছাই করলে দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা থাকে। ভোটাভুটির বিষয়টি থাকলে কেনাবেচা হওয়ার সুযোগ থাকে এবং পারস্পরিক বিভক্তি সৃষ্টিরও আশঙ্কা দেখা দেয়।
মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বৈরী সময় ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস ও চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার গভীর ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা হলেও শুধুমাত্র সাংগঠনিক কাঠামোর সুদৃঢ় ও শক্তিশালী ভিত্তির কারণে আওয়ামী লীগ টিকে আছে ও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রিক পুরাণের মিথ ফিনিঙ পাখির মতন ছাইভস্মের মধ্যেও বারবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস যেমন জনগণ, আওয়ামী লীগের ভিত্তি ও অস্তিত্ব নির্ভরশীল শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির ওপরই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আওয়ামী লীগ টানা চারবার ক্ষমতায় আছে। এ নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ধস নামানো বিজয় অর্জিত হয়েছিল প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এই প্রতিপক্ষ ছিল নেতৃত্বহীন বিএনপি নামক একটি প্ল্যাটফর্ম এবং স্বাধীনতা ও দেশবিরোধী রেজিমেন্টাল জামায়াতে ইসলামী ও প্রতিক্রিয়াশীল ডান ও অতি বাম শক্তির মোর্চা। কিন্তু পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনগুলোতে আমাদের কোনো প্রবল প্রতিপক্ষ না থাকলেও দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি খুব একটা শক্তিশালী হয়নি। বরং নিজেদের মধ্যে কলহ, বিবাদ ও বিভক্তি বেড়েছে। আরো বেড়েছে দলের মধ্যে হাইব্রিডের প্রবল স্রোত। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন, নিজস্ব গ্রুপ ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধির জন্য বাইরে থেকে ভিন্নমতের মানুষ দলে ঢোকানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির আওতাধীন ২৭টি ইউনিট ও ২৯টি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ১৫টি থানার মধ্যে একটি থানার সম্মেলন হয়েছে। এখনো পর্যন্ত ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের যে সকল কমিটির সম্মেলন হয়নি সেগুলো পরিস্থিতিগত কারণে নয়, স্থানীয় নেতৃত্বের অনীহা ও আন্তরিকতার অভাবের কারণে হয়নি। মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে এ সকল ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সম্মেলন কেন হয়নি এ ব্যাপারে তারা অবগত আছেন। তবে এটাও ঠিক, সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্থানীয় নেতৃত্ব যদি ঐকমত্যে না পৌঁছে সেখানে কিছুতেই জোর করে সম্মেলন করতে হবে–এমন মনোভাব চাপিয়ে দেওয়া যায় না। স্থানীয় নেতৃত্ব যখন যেখানে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আন্তরিক ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সেক্ষেত্রে সর্বাধিক সহযোগিতা প্রদান করে গেছে।
তিনি বলেন, আজ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ৫৯তম কার্যকরী কমিটির সভা সম্পন্ন হতে চলেছে। এর আগে অনুষ্ঠিত কার্যকরী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আলোচনা, তর্ক–বিতর্ক হয়েছে। তবে কোনো ক্ষেত্রেই এক তরফা বা একচেটিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকলের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত বা অধিকাংশের মতামত সাপেক্ষে গৃহীত হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রশ্ন ওঠার অবকাশ নেই। তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অবহিত করেন, মহানগর আওয়ামী লীগ কখনো কোনো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার বাইরে যায়নি এবং কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সকল সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী জুলাই মাসে অবশিষ্ট ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারিত তারিখ, সময় ও স্থানে আড়ম্ভরপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সকল কর্মপন্থা চূড়ান্ত করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দ ও স্বস্তির দিন। কেননা এই দিনে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগসহ তার অধীনস্থ সকল ধাপ ও স্তরের সাংগঠনিক কমিটিগুলোর সম্মেলন ও কমিটি গঠনের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাতে প্রত্যেক নেতাকর্মীর মনোবল চাঙ্গা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাড. সুনীল কুমার সরকার, অ্যাড. মো. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য একেএম বেলায়েত হোসেন, শফর আলী, শেখ মাহমুদ ইছহাক, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম এমপি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাবেক এমপি নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিকুল ইসলাম ফারুক, অ্যাড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, জুবাইরা নার্গিস খান, আবু তাহের, ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, শহিদুল আলম, নির্বাহী সদস্য আবুল মনসুর, সৈয়দ আমিনুল হক, পেয়ার মোহাম্মদ, গাজী শফিউল আজিম, কামরুল হাসান বুলু, বখতিয়ার উদ্দিন খান, গোলাম মো. চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, আহমদ ইলিয়াছ, বিজয় কিষান চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, মোহব্বত আলী খান, আবদুল লতিফ টিপু, ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ ও হাজী বেলাল আহমেদ।