আজ ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। স্বাধীনতার ৫২ বছর। একাত্তরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।’ এরপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন হয় প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
১৯৭১ সালের এই দিনটিতে আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটেছিল বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। ডাক এসেছিল দেশকে হানাদারদের কবল থেকে মুক্ত করার। পাকিস্তানি শোষকের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। এরই ধারাবাহিকতায় ৯ মাস ত্যাগ–তিতিক্ষা আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়েছিল বিজয়। আজ জাতি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। শ্রদ্ধা জানাবে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ও স্বাধীনতার ঘোষণাকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পাশাপাশি পুরো দেশ আজ মেতে উঠবে স্বাধীনতার উৎসবে, স্মরণ করবে বীর সন্তানদের।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এর একদিন আগে ২৫ মার্চের মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া হত্যাযজ্ঞের ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙালি দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে। ওই রাতেই তৎকালীন পূর্ব বাংলার পুলিশ, ইপিআর ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশপ্রেমের স্পৃহায় শুরু করে প্রতিরোধ যুদ্ধ, সঙ্গে যোগ দেয় সাধারণ মানুষ। ৯ মাসের যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় স্বাধীনতা, জন্ম হয় বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের অনবদ্য অধ্যায় হলো স্বাধীনতার ঘোষণা। বাঙালি জীবনের অগণিত দিনের চেয়ে আলাদা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। এই দিনটি হচ্ছে হাজার বছরের বাঙালির অধীনতা থেকে মুক্ত হওয়ার জীবন–মরণ লড়াইয়ে নেমে পড়ার দিন। স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ স্বাধীনতা মুহূর্তে অর্জিত হয়নি। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের পেছনে রয়েছে এক কালজয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা। ইতিহাসের এক স্মরণীয় আপসহীন লড়াইয়ের বিনিময়ে জন্ম লাভ করে চিরসবুজ বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার মূল অভিপ্রায় ছিল একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং সার্বিকভাবে একটি মুক্তির সংগ্রাম। মুক্তি সবসময় একটি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করতে হয়। সেই সংগ্রাম ছিল স্বাধীনতার সংগ্রাম। বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতীয় জীবনের গৌরবজনক অধ্যায়। দীর্ঘদিনের আন্দোলন–সংগ্রাম সর্বোপরি ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা ছিনিয়ে এনেছি মহান স্বাধীনতার লাল সূর্য, পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ ও পতাকা। অসাধারণ ও অকৃত্রিম দেশপ্রেমের কারণেই বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন।
৫২তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন, স্বাধীনতার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেছেন, দেশে উন্নয়নের যে গতিধারা সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সব বাংলাদেশিকে ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে লালন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।
আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সব সরকারি–বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ছাড়াও চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় ও রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হবে। দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। হাসপাতাল, সরকারি শিশুসদন, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম এবং কারাগারে দেওয়া হবে উন্নত খাবার। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলো বিশেষ সংখ্যা ও নিবন্ধ প্রকাশ করবে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় গত দেড় বছর ধরে বিকল্প শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন চট্টগ্রামবাসী। গণপূর্ত বিভাগ গত বছরের শেষ দিকে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে ২৬ মার্চের অনুষ্ঠান নতুন শহীদ মিনারে হচ্ছে না। তবে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানায় গণপূর্ত বিভাগ।
নগরীর মিউনিসিপ্যাল স্কুলে অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে কুচকাওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা, চলচ্চিত্র প্রদর্শন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে।
মহানগর আওয়ামী লীগ : মহান স্বাধীনতা দিবস পালন ও ইফতার মাহফিল উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আজ বিকাল ৩টায় কাজির দেউড়ির চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এতে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন আহ্বান জানিয়েছেন।