শাঁখের ধ্বনি আর ঢাকের বাদ্যিতে ভক্তদের পদচারণায় গতকাল মুখর ছিল শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর পূজামণ্ডপ। সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রামের মণ্ডপগুলোতে ভক্তদের ভিড় আরো বাড়ে। বিশেষ করে নগরীর থিমভিত্তিক মণ্ডপগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। গতকাল মহাসপ্তমী তিথিতে সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যার পর থেকে একটানা বৃষ্টি শুরু হয়। কিন্ত ভক্তদের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এখন আনন্দমুখর পরিবেশ। আজ সোমবার শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনে মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজা। নগরীর পাথরঘাটার শ্রী শ্রী শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরসহ বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপে একই সঙ্গে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। আজ সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। এরপর পুষ্পাঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ শেষে বিকাল ৪টা ৫ মিনিট থেকে ৪টা ৫৩ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিনের প্রধান আকর্ষণ কুমারী পূজা। নগরীর শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে প্রতি বছরের মতো এবারও কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে, যাকে দেবী দুর্গার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুসারে তার একটি নামকরণও করা হয়েছে। শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুব্জিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চৌদ্দয় পীঠনায়িকা, পনেরোয় ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অন্নদা বলা হয়।
এর আগে গতকাল মহাসপ্তমীর সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে শারদীয়া দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, ঘট স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা প্রশস্তা। এরপর দেবীর সপ্তমীবিহিত পূজা শেষে আয়োজন করা হয় পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি। অনেক মণ্ডপে ছিল আরতি, বস্ত্র বিতরণ, ভক্তিমূলক সঙ্গীত, নাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য আয়োজন।
পূজামণ্ডপগুলো এদিন ঢাক-ঘণ্টার বাদ্যি-বাজনা আর ভক্তদের পূজা-অর্চনায় মুখর হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপ ঘুরে উৎসবের ছোঁয়া দেখা গেছে। উৎসবে যোগ দিয়েছেন অন্য ধর্মের মানুষও। এতে মণ্ডপগুলো বাঙালির সর্বজনীন উৎসবে রূপ নেয়।