মরক্কোয় ভয়াবহ ভূমিকম্প নিহত হাজারের বেশি

ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা বহু পরিবার

| রবিবার , ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

মরক্কোর মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৩৭ জন মারা গেছে। ৬৭২ জন আহত হওয়ার খবর জানা গেছে, যাদের মধ্যে ২০৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, অধিকাংশ মানুষ মারা গেছে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যেখানে পৌঁছানো বেশ কঠিন। খবর বিবিসি বাংলার।

ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মারাক্কেশ শহর থেকে ৭১ কিলোমিটার দূরে এটলাস পর্বতমালা এলাকার ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানার পর লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পটির ১৯ মিনিট পর আবারো ৪ দশমিক ৯ মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও রাস্তায় ধ্বংসস্তূপের ভিডিও দেখা যাচ্ছে। মারাক্কেশ ৯ম পৃষ্ঠার ৪র্থ কলাম

শহরের পুরনো অংশে কিছু ভবন ধ্বসে পড়েছে বলে সেখানকার একজন অধিবাসী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে।

জানা যায়, ভূমিকম্পের সময় মারাকেশ থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরের বন্দর নগর কাসাব্লাঙ্কাতেও কম্পন অনুভূত হয়। কাসাব্লাঙ্কা শহরের একজন বাসিন্দা লা মাতিন পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, এখন অনেক মানুষই মানুষ খোলা জায়ঘায় থাকছে। সবাই ভয় পাচ্ছে আরো একটি কম্পনের। পাশাপাশি চোরডাকাতের আতঙ্কও রয়েছে। মরক্কোর গতকালের ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল অ্যাটলাস পর্বতমালা অঞ্চলে এমন অনেক দুর্গম গ্রাম রয়েছে যেখানে পৌঁছানো যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কাজেই এই ভূমিকম্পের আসল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী, তা নিশ্চিতভাবে জানতে বেশ কয়েকদিন লেগে যাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উৎপত্তিস্থলের কাছে পর্বত এলাকার সাধারণ ভবনগুলো হয়তো টিকে নেই এবং অনেক দূরের এলাকা হওয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সময় লাগতে পারে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরেজমিন অনুসন্ধানের পর জানিয়েছে, ভূমিকম্পে বহু পুরনো ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক পরিবার ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। মারাকেশের হাসপাতালগুলোতে বিপুল পরিমাণে মানুষ আসছে এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে নাগরিকদের রক্তদান করার আহ্বান জানিয়েছে শহরের কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতিতে সমবেদনা জানিয়েছেন এবং মরক্কোকে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। মরক্কোতে যেন মানবিক সহায়তা পাঠানো সহজ হয়, সেজন্য আলজেরিয়া তাদের এয়ারস্পেস ব্যবহার করতে দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্সি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভাতৃপ্রতিম মরক্কান মানুষকে সহায়তার জন্য তারা মানবিক সহায়তা ও লোকবল সরবরাহ করতে প্রস্তুত। ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, তার দেশ মরক্কোকে প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে সাহায্য করতে প্রস্তুত। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি তার দেশ সহায়তার জন্য প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস ক্লেভারলিসহ বিশ্বনেতারা সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

মরক্কো এর আগেও বেশ কয়েকবার ভয়াবহ ভূমিকম্পের কবলে পড়েছে। ২০০৪ সালে দেশটির উত্তরপূর্বের আল হোসেইমা অঞ্চলে ভূমিকম্পে ৬২৮ জন মারা গিয়েছিল। আর ১৯৬০ সালে আগাদির অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অন্তত ১২ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। এর থেকে ধারণা করা যায় যে এবারের ভূমিকম্পেও হতাহতের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়তে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্রীলঙ্কার কাছে ২১ রানের হার টাইগারদের
পরবর্তী নিবন্ধপোশাকের রপ্তানি চালানে পাঁচফোড়ন সুগন্ধি চাল!