কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ময়ূরের ঘরে এসেছে একঝাঁক নতুন অতিথি। প্রায় দুই ডজন ডিম দিলেও ময়ূর নয়, এসব ডিম থেকে ময়ূরের বাচ্চা ফুটিয়েছে বন মুরগি।
শুধু তাই নয়, বাচ্চা ফোটানোর পর সেগুলোকে নিজের বাচ্চা হিসেবে আগলেও রেখেছে বন মুরগি। কোয়ারেন্টাইন শেডের বাইরে থেকে এই দৃশ্য দেখে বেশ আকৃষ্ট হচ্ছে পার্কে আগত পর্যটক–দর্শনার্থীরা। তবে শেডের কাছে ঘেঁষে বাচ্চাগুলোর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে বন মুরগি মা–কে উত্তেজিত হতেও দেখা যায়। এদিকে ময়ূরের বাচ্চাগুলোকে নিয়মিত পরিচর্যাসহ প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ দেওয়ার জন্য একজন কেয়ারটেকারও নিয়োজিত রয়েছেন। এভাবেই দিন দিন বড় হতে চলেছে ভারতীয় বা দেশীয় প্রজাতির ময়ূরের এই বাচ্চাগুলো।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, বন মুরগির মাধ্যমে ডিম থেকে ফোটানো ময়ূরের বাচ্চাগুলোকে সংরক্ষণের পর পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে রাখা হয়েছে। প্রায় একমাস ধরে হাসপাতালের শেডেই বড় হচ্ছে বাচ্চাগুলো। পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে ময়ূরের বাচ্চাগুলোকে দেখভালকারী আজগর আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়ম করে ময়ূরের বাচ্চাগুলোকে পরিচর্যা করা হয়। নিয়মিত খেতে দেওয়া হচ্ছে দানাদার খাবার হিসেবে ভুট্টা, গম, মিক্সড ফ্রুট। এছাড়াও প্রোটিনের জন্য খাওয়ানো হচ্ছে ডিম।’
পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে বড় করে তোলা ময়ূরের বাচ্চাগুলো বেশ সুস্থ রয়েছে। নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে বাচ্চাগুলোকে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পার্কে স্ত্রী ও বিপরীত লিঙ্গের প্রাপ্তবয়স্ক ময়ূরের সংখ্যা ১৯টি। প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী লিঙ্গের ময়ূর থেকে পাওয়া প্রায় দুই ডজন ডিম সংরক্ষণ করা হয় খুব যত্ন করে। এর পর বন মুরগিকে হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে রেখে সেখানে ময়ূরের ডিমগুলো দেওয়া হয়। সেই ডিমে তা দিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে ২০টি বাচ্চা ফোটায় বন মুরগি।
পার্ক তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘স্ত্রী লিঙ্গের প্রাপ্তবয়স্ক ময়ূরের গড় ওজন ৩ থেকে ৪ কেজির হয়ে থাকে। অপরদিকে পুরুষ ময়ূরের গড় ওজন হয়ে থাকে ৪ থেকে ৬ কেজি পর্যন্ত। বর্তমানে পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে বড় করে তোলা বাচ্চাগুলোর বয়স একমাসের একটু বেশি। আগামী ৪ মাস পর্যন্তই এসব বাচ্চা কোয়ারেন্টাইন শেডেই বেড়ে উঠবে। এজন্য সকল ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সাফারি পার্ক বন্যপ্রাণী ও পশু–পাখির প্রজননের ক্ষেত্রে বিরাট সফলতা দেখিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় বিরল প্রজাতির ভারতীয় বা দেশিয় প্রজাতির ময়ূরের ঘরে এসেছে একঝাঁক নতুন অতিথি।’
একনজরে ময়ূর : বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের নির্দিষ্ট বেষ্টনিতে থাকা ময়ূরগুলো ভারতীয় বা দেশিয় প্রজাতির। এসব ময়ূরের বৈজ্ঞানিক নাম চধাড় পৎরংঃধঃঁং। ইংরেজিতে এদেরকে বলা হয় ওহফরধহ ঢ়বধভড়ষি। এসব ময়ূর দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ [২] ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। এটি ভারতের জাতীয় পাখি। ভারতীয় ময়ূরকে ‘আইইউসিএন’ রেড লিস্টে ন্যূনতম উদ্বেগ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এই ময়ূর হিন্দু ও গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীতে পূজা করা হয়। ভারতীয় ময়ূর যৌন দ্বিরূপতার একটি চিহ্নিত রূপ প্রদর্শন করে। ময়ূরটি উজ্জ্বল রঙের, প্রধানত নীল পাখার মতো স্প্যাটুলা–টিপড তারের মতো পালকের ক্রেস্টসহ এবং এটি দীর্ঘায়িত উপরের–লেজের আবৃত পালক দিয়ে তৈরি লম্বা ট্রেনের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত যা রঙিন চোখের দাগ বহন করে।