মমতাজদের জীবন চলে যেভাবে

মহেশখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ২১ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

বছরের ছয় মাস সোনাদিয়ার শুটকি মহালে বহদ্দারের কেল্লায় শত নারী শ্রমিকের সাথে মাছ বেছে জীবন চলে স্বামী পরিত্যক্তা মমতাজের। বয়স ২৮ বছর। এক সন্তানের জননী। ১০ বছরের কন্যা সন্তান সাহেনা আক্তারকে রেখে পালিয়ে গেছেন স্বামী। ৫ বছর ধরে সোনাদিয়ায় শুটকি মহালে ঠাঁই হয়েছে তার। বছরের ৬ মাস চলে তার জীবিকা। বাকি ৬ মাস অনাহারে-অর্ধাহারে কাটে দিন। মজুরিও কম। বহদ্দারদের কেল্লায় কাজ করে বেতন পান দৈনিক ৩শ টাকা। শুধু মমতাজ নন, তার মতো আরও অন্তত শতাধিক নারী সোনাদিয়ায় শুটকি মহালে মাছ বাছাইয়ের কাজ করেন।
মমতাজের বাড়ি মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা গ্রামে। বাবা মারা গেছেন অনেক আগে। বিয়ে হয়েছিল মহেশখালীর বাইরের এক ছেলের সাথে। স্বামী ছিলেন মাদকাসক্ত ও অকর্মণ্য। একমাত্র মেয়ের বয়স যখন চার বছর, তখনো স্বামী তাকে ফেলে অন্যত্র গিয়ে বিয়ে করেন। সেই থেকে মমতাজের মাছ বাছার কাজ। মেয়েকে নিয়ে সোনাদিয়ায় বহদ্দারের কেল্লার পাশে পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে বাস করেন।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে শুটকি মহালে গিয়ে মাছ বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। শ্রমের অনুপাতে বেতন নগণ্য। বোটের মালিকরা তাকে কিছু মাছ দিলে সেগুলো বিক্রি করে পান ১০০/১৫০ টাকা।
সোনাদিয়ার শুটকি মহালের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দুই শতাধিক নারী শুটকি মহালে কাজ করে। এখানে পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের কাজ বেশি। মাছ বাছাই করা, ধোয়া, শুকাতে দেওয়া, শুকানোর পর রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত করাসহ বিভিন্ন কাজ করেন নারীরা। ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের চেয়ে কাজ বেশি করলেও নারী শ্রমিকদের বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়।
মহালের মালিকেরা জানান, শুটকি মহালে যেসব পুরুষ শ্রমিক কাজ করে তাদের সাথে ৯ মাসের জন্য ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। আর নারী শ্রমিকদের দৈনিক মজুরিতে রাখা হয়। নারী শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় দৈনিক ৩০০ টাকা। এক বছর আগেও নারী শ্রমিকদের বেতন ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
মমতাজ বেগম বলেন, এখানে সারা দিন কাজ করে পাওয়া বেতনের টাকা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে-পরে জীবন চলে। পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে ১০ বছরের মেয়ে সাহেনা আক্তারও কাজ করে। মেয়েটিকে স্কুলে পাঠাতে পারি না। তিনি বলেন, পুরুষদের চেয়ে আমরা কোনো অংশে কম পরিশ্রম করি না, কিন্তু বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হই। অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসা করার সামর্থ্যও থাকে না। নারী শ্রমিকদের যথাযথ বেতন দেয়ার দাবি জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশত কোটি টাকার মালিক ইউপি মেম্বার রাসেল!
পরবর্তী নিবন্ধশক্তির প্রয়োজনে চাঁদে পরমাণু চুল্লি বসাবে নাসা