মমতাজউদদীন আহমদ (১৯৩৫–২০১৯)। নাট্যকার, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ যিনি এক অঙ্কের নাটক লেখায় বিশেষ পারদর্শিতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। মমতাজউদদীন আহমদের জন্ম ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে। তার বাবা কলিমুদ্দিন আহমদ ও মা সখিনা বেগম। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। তখন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহী জেলার বিভিন্ন শাখার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের হয়ে ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম, নানা দাবিতে সক্রিয় থাকার কারণে ১৯৫৪, ১৯৫৫, ১৯৫৭ ও ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তাকে কারাগারেও বহুদিন থাকতে হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থাতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চে ও পথনাটকে অভিনয় করেছিলেন মমতাজউদদীন আহমদ। দিয়েছিলেন নির্দেশনাও। তবে মমতাজউদদীন আহমদের নাটক লেখার যাত্রা শুরু হয় আরো কিছুদিন পরে, ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু হয় মমতাজউদদীন আহমদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় মমতাজউদদীন আহমদ ছিলেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি লিখেছিলেন ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ নাটকটি। মুক্তিযুদ্ধের পর একে একে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন মমতাজউদদীন আহমদ। পরবর্তীতে ১৯৭৭–৮০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন মমতাজউদদীন আহমদ। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদক লাভ করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ : গবেষণা ও প্রবন্ধগ্রন্থ; ‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত, ‘প্রসঙ্গ বাংলাদেশ প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু’। নাটক; ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ (১৯৭১), ‘কি চাহ শঙ্খ চিল’ (১৯৮৫), ‘প্রেম বিবাহ সুটকেশ’, ‘জমিদার দর্পণ রাজা অনুস্বরের পালা, ‘ক্ষত বিক্ষত’, ‘রঙ্গপঞ্চাদশ, ‘বকুল পুরের স্বাধীনতা’, ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’, ‘রাক্ষসী’ ইত্যাদি। তিনি ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুন মৃত্যুবরণ করেন।