মফস্বলে পড়ে ব্যবসায় শিক্ষায় তাক লাগানো ফল

তাজনীন মেহেজাবীন চৌধুরী

আনোয়ারা প্রতিনিধি | রবিবার , ১৩ জুলাই, ২০২৫ at ৮:০৪ পূর্বাহ্ণ

মফস্বলের বিদ্যালয়ে পড়ে ব্যবসায় শিক্ষায় তাক লাগানো ফল পেয়েছেন তাজনীন মেহেজাবীন চৌধুরী। আনোয়ারা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ১২৩৭ নম্বর পেয়ে বাণিজ্য বিভাগে ‘সেরা’ হিসাবে স্থান করে নিয়েছেন। তাজনীনের এই সাফল্যে খুশিতে ভাসছেন তার নিজ উপজেলা আনোয়ারা ও নিজের গ্রাম ডুমুরিয়ার মানুষ। তার স্কুলের শিক্ষকরাও এই খবরে খুশি। তবে তাজনীন মনে করেন পড়ালেখা শেষ করে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যেই আসল খুশি। সংগ্রামী মায়ের মুখে হাসি ফোটানোই তার জীবনের লক্ষ্য। তাই পড়ালেখায় ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সামনে এগুতে চান।

জিপিএভিত্তিক ফলাফল প্রকাশের এই সময়ে শিক্ষাবোর্ড থেকে আলাদা করে সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বরের কোনো তালিকা প্রকাশের সুযোগ নেই। তবে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগে ১২৩৭ নম্বর পাওয়া আসলেই বড় অর্জন বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।

গতকাল শনিবার তাজনীনের মা শাহিন আকতার রুমার সঙ্গে কথা হয়। স্বামীর সঙ্গে থাকেন না। তিনি স্কুল শিক্ষিকা। একাই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন সন্তানকে। তাই বারবার মায়ের জন্য কিছু করে দেখানোর আকুতি তাজনীনের মধ্যে। তিনি বলেন, ভালো ফলাফল করতে পারলে বড় গলায় মায়ের উৎসাহ আর অবদানের কথা বলবএমন আশা ছিল সবসময়। আজ সেটা কিছুটা হলেও পূরণ হয়েছে। পড়ালেখা শেষ করে বিচারক হওয়ার স্বপ্ন তার। সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই তার সাধনা। সেটা না পারলে হবেন নারী উদ্যোক্তা। গতানুগতিক ব্যবসার সাথে আধুনিক চিন্তাধারা ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটাতে চান তিনি।

তাজনীন বলেন, শহরের ছেলেমেয়েরা অনেক সুযোগসুবিধা পায়। অনেকে ৫১০টা কোচিং সেন্টারেও পড়ে। গ্রামে অত সুযোগ নেই। স্কুল ও ঘরে নিয়মিত পড়তাম। ঘণ্টা ধরে পড়ালেখায় অভ্যস্ত ছিলাম না। যা পড়তাম মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতির সময় কিছুদিন শারীরিক অসুস্থতা ছিল। জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ঢাকায়ও যেতে হয়েছে কয়েকবার। তারপরও যতটুকু ফলাফল হয়েছে তাতে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে ইংরেজি ও ব্যবসায় শিক্ষায় আশার চেয়ে কম নম্বর পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভালো শিক্ষার্থী মানেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হবে এমন নয়। আমি সবসময় পড়ার মধ্যে আনন্দ খোঁজার চেষ্টা করেছি। আনন্দ নিয়ে পড়েছি। একাডেমিক লেখাপড়ার বাইরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ৫টি পুরস্কার রয়েছে বলে জানান তিনি।

তাজনীনের মা শাহিন আক্তার ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। মেয়ের জন্যই জীবনের একটি বড় সময় একা পাড়ি দিচ্ছেন। স্কুল শেষ করে এসে নিজেও মেয়ের লেখাপড়া গুছিয়ে দিতেন। তিনি বলেন, আজ আমার স্বপ্ন কিছুটা পূরণ হয়েছে। মেয়েটি মানুষের মতো মানুষ হলে তবেই পূর্ণ সফলতা।

ডুমুরিয়া রূদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মিতা দে জানান, প্রাইমারি লেভেল থেকে তাজনীন পড়ালেখায় খুব ভালো ছিল। নিজের স্কুলের ছাত্রীর সাফল্যে খুশি আনোয়ারা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে ফলাফল জানতে পেরেছি। তার এই অর্জন পুরো স্কুলের জন্য গর্বের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্রদলের কমিটিতে নাম আসায় চুয়েটের ৯ শিক্ষার্থীকে শোকজ
পরবর্তী নিবন্ধরবিনের স্বীকারোক্তি, রিমান্ডে আরেকজন