‘ছাগল কাণ্ডে’ আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের ৭ সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট–বিএফআইইউ। একই সঙ্গে তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুরোধে গতকাল মঙ্গলবার এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, তার (মতিউর রহমান) ও পরিবারের সদস্যদের সকল বিও হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সিডিবিএলকে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এসব বিও হিসাবের লেনদেন স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে তাদের নামে কতগুলো বিও হিসাব রয়েছে তা জানাননি তিনি। এনবিআরের সাবেক এ কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার পরদিন এ আদেশ এল। কোরবানি ঈদের সময় ১৫ লাখ টাকায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান। এরপর তাকে ঘিরে সোশাল মিডিয়ায় আলোচনার মধ্যে সংবাদমাধ্যমে একের পর এক খবর আসতে থাকে। পরে কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে ইতোমধ্যে এনবিআর থেকে সরিয়ে গত রোববারই অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তার সম্পদের খোঁজে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তিনি মুশফিকুর রহমান ইফাতসহ দেশত্যাগ করেছেন বলে খবর আসে সংবাদ মাধ্যমে। এমন খবরের মধ্যে গত সোমবার দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনে মতিউর, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও ছেলে আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
‘ছাগলকাণ্ডের’ পর মতিউর রহমান এ আলোচনায় ঘি ঢালেন ‘ছেলের’ পরিচয় অস্বীকার করে। একটি টেলিভিশনের প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, মুশফিকুর রহমান ইফাত নামে কেউ তার ছেলে বা আত্মীয় নয়, এমন নামে কাউকে চেনেন না পর্যন্ত। তার একটিই ছেলে, তার নাম তৌফিকুর রহমান। এরপর ইফাতের পরিচয় ও পারিবারিক ঠিকুজি নিয়ে ফেসবুকে নানা তথ্য আসতে থাকে। ইফাতের সঙ্গে মতিউর রহমান এবং পরিবারের অন্যদের ছবিও প্রকাশিত হয়। এক পর্যায়ে সামনে আসেন ফেনী–২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তিনি দাবি করেন, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। এরপর মতিউর ও তার পরিবারের সম্পদের বিষয়ে নানা তথ্য আসতে থাকে খবরে। একে একে পুঁজিবাজারের তার বিনিয়োগ ও মুনাফার খবরও আসে। এর সূত্রপাত তিনিই করেছিলেন ওই বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে আলোচনায়।
তিনি বলেছিলেন, চাকরির পাশাপাশি তিনি ব্যবসায় জড়িয়েছেন; বিনিয়োগ করেছেন পুঁজিবাজারেও। তিনি নিজেই বলেছিলেন মেয়ের নামে ১ কোটি টাকা বিনয়োগ করে ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করার কথা। এরপর বিভিন্ন কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনার মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল অর্থ মুনাফা করার খবর আসতে থাকে। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে মতিউর এবং তার দুই স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ১৬টি বিও অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য প্রকাশ করা হয়। পুঁজিবাজারে মতিউরের বিনিয়োগ নিয়ে এমন সব খবরের মধ্যে সিডিবিএলকে তাদের সব বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ রাখার নির্দেশ দিল বিএসইসি।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ইলেকট্রনিক শেয়ার সংরক্ষণ, লেনদেন নিষ্পত্তি ও শেয়ার হস্তান্তরের হালনাগাদ তথ্য রাখে। সব ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা–বেচা ও স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন তথ্য সিডিবিএল এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। নিষেধাজ্ঞা আসায় মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় থাকা বিও হিসাব থেকে কোনো প্রকার শেয়ার কেনা–বেচা বন্ধ থাকবে। বিও হিসাবে থাকা অর্থ উত্তোলন করা সম্ভব হবে না।