ঢাকার মগবাজার ওয়ারলেস গেটে বিকট এক বিস্ফোরণে ভবন ধসে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ, আহত হয়েছে অনেকে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই এলাকাটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে বলে স্থানীয়রা জানায়। এতে তিনতলা একটি ভবন ধসে পড়ে। তার আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে ভেঙে পড়ে। সড়কে থাকা দুটি বাসও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ঢাকার মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম রাত সাড়ে ১০টার দিকে বলেন, আমরা এই পর্যন্ত তথ্য পেয়েছি যে, এই ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। এদিকে এরপর ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনায় তিনজন মারা গেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আহত অনেককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ১২ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দুজন মারা গেছেন। দুজনই পুরুষ।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আহতদের মধ্যে চারজনের শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। দুজনকে আনা হয়েছে মৃত অবস্থায়। রাত ১০টার দিকে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিসাধীন স্বপন (৩৫) নামে একজন মারা যান।
মগবাজারের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি শিশু এবং মধ্য বয়সী এক পুরুষ ব্যক্তির লাশ দেখা গেছে। সেখানে আহত অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জান্নাত (২৫) নামে একজন মারা যান বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া।
ঢামেক হাসপাতাল জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে এ পর্যন্ত ৩৯ জন রোগী পেয়েছি। এর মধ্যে রাত সোয়া ১০টার সময়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জান্নাত (নামে এক নারী মারা গেছেন।
নাহিদ নামে আহত এক যুবক ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের জানান, তিনি বাসে ছিলেন এবং খিলগাঁওয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। সাজ্জাদ নামে আরেক বাসযাত্রীও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত পথচারী মোহাম্মদ শাহ আলমের ছেলে সাগর বলেন, ঘটনার সময় তার বাবা ওই ভবনের নিচে ছিলেন। ছিটকে আসা কাচে তিনি আহত হন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ৭৯ নম্বর আউটার সার্কুলার রোডের পুরনো একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়েছে। ওই ভবনের দোতলায় সিঙ্গারের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। নিচতলায় খাবারের দোকান শরমা হাউজ ও বেঙ্গল মিটের বিক্রয় কেন্দ্র ছিল, যা মিশে গেছে। সড়কের পাশের ওই ভবনের বিপরীত দিকে আড়ং রয়েছে। বিস্ফোরণে আড়ংসহ আশপাশের ডজনখানেক ভবনের কাচ চৌচির হয়ে রাস্তায় পড়েছে।
বিস্ফোরণের কারণ কী : বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের ধারণা, গ্যাস থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে। বিস্ফোরণের পর স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, কোনো ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরিত হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, কোনো ভবনের জেনারেটর কিংবা এসি থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যায়। বৈদ্যুতিক সংযোগজনিত কোনো কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেনি বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। মাঝে সতর্কতামূলক কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, তিনতলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণ ঘটেছে। অনেক ফ্রিজ থাকে সেখানে, তা থেকে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সাজ্জাদ বলেন, গ্যাস জমে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। তদন্তের পরই তা স্পষ্ট হওয়া যাবে।