মিয়ানমারের মংডু শহরে জান্তা বাহিনীর সাথে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাত বেড়েছে। গত দুই দিন ধরে সেখানে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে এপারে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা। এই সুযোগে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এছাড়া সীমান্তে ওপারে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে অন্তত ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে মংডু টাউনশিপের সুদাপাড়া ফয়েজী পাড়া, সিকদারপাড়া, ও নুরুল্লাপাড়া গ্রাম থেকে নৌকা নিয়ে রোহিঙ্গারা নাফ নদী অতিক্রম করছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলী, বরইতলী, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজির পাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, মিস্ত্রি পাড়া, খুরের মুখ, আলীর ডেইল, মহেশখালীয়া পাড়া, লম্বরী, ঘোলারচর, বাহারছড়া উপকূল দিয়ে। মংডুর উত্তরের প্যারাংপুরু ও দক্ষিণের ফাদংচা এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছেন।
গত শুক্রবার রাতে নাফ নদী পেরিয়ে কেরুনতলীর এক বাড়িতে আশ্রয় নেয় ১৫ শিশু ও ৯ নারীসহ চারটি পরিবারের ৩০ জন রোহিঙ্গা। তাদের বাড়ি মংডু টাউনশিপের পাশের গ্রাম সুদাপাড়াতে। তাদের দুজন জাহেদা বেগম (৩৫) ও নুর জাহান (৪০) বলেন, সাত–আট দিন ধরে মংডুতে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষ শক্তিশালী গ্রেনেড–বোমা, মর্টার শেলের পাশাপাশি ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। যুদ্ধবিমান থেকেও বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। তাতে অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছেন। তারা বলেন, যুদ্ধের মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বসতি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে তাই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টায় রয়েছেন। তবে নৌকার অভাবে বাংলাদেশে ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে। দলের আরেক সদস্য সাব্বির আহমদ বলেন, নাফ নদী অতিক্রম করে টেকনাফে ঢুকতে তাদের (রোহিঙ্গাদের) কাছ থেকে মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন দালালরা।
টেকনাফের বাসিন্দা নোমান অরূপ বলেন, গত ছয় মাস ধরে মিয়ানমারে যুদ্ধ চলছে। যার প্রভাব পড়েছে এপারে। মর্টার শেল, গ্রেনেড ও বোমার বিস্ফোরণ এখন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা আতঙ্ক নিয়ে দিনাতিপাত করছি।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইতোমধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। অনেক রোহিঙ্গা জমাট হয়ে আছে ঢুকার জন্য।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজির আহমদ বলেন, কেরনতলী সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করার সময় প্রায় ৩ শতাধিক রোহিঙ্গাকে ধরে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
টেকনাফে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন বলেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু–দ্দৌজা বলেন, বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে নতুন করে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে এ পর্যন্ত কত রোহিঙ্গা ঢুকেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।