ভয়ঙ্কর কোভিড : নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে

রাইসুল উদ্দিন সৈকত

| সোমবার , ১২ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:৩০ পূর্বাহ্ণ

বইছে এক অস্থির সময়। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিনই প্রাণহানির সঙ্গে বাড়ছে সংক্রমণ। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপের পরেও সংক্রমণ, মৃত্যুহার ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সংকট আরো বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে চিকিৎসা এবং জরুরি সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলো। মহামারী শুরুর পর বাংলাদেশে গত একমাসে সবচে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া গত এক সপ্তাহে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার অতিক্রম করেছে। মৃত্যুও বেড়েছে।
দেশের এই অবস্থায় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন যে, আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে পুরোদেশে সাত দিনের ‘কঠোর’ লকডাউন শুরু হবে। তবে এই কঠোর লকডাউনের স্পেসিফিক কোনো বিবরণ দেননি মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিতসহ সব ধরণের অফিস এবং একই সাথে কল কারখানাও বন্ধ থাকবে। কঠোর লকডাউনের সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
কঠোর লকডাউনের সময় আরও বাড়ানো হবে কি-না তা পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে, জানান মন্ত্রী। এর আগে করোনার জন্য দেশে গত সোমবার থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সাতদিনের এ নিষেধাজ্ঞায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
আমার মতে, লকডাউন হলো, যে যেখানে আছে সেখানে থাকা। এখানে কঠোর লকডাউন, শিথিল লকডাউন বলে কথা নেই। লকডাউন একটি বৈজ্ঞানিক পন্থা করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং সেখানে এটার মাধ্যমে মানুষের যে মুভমেন্ট সেটাকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া।
২০২০ সালের মার্চের ৮ তারিখ বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়, তখন থেকে আমি বেশ কিছু লেখা লিখেছি করোনা সংশ্লিষ্ট এবং করোনা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে। কিন্তু করোনার ক্লিনিক্যাল কোনো দিক নিয়ে আমি কখনো কোনো লেখা লিখিনি। আমি লিখেছি, করোনা সংশ্লিষ্ট প্রত্যয়ন নিয়ে। সমপ্রতি বই মেলায় করোনা নিয়ে আমার একটি বইও বেরিয়েছে। দাঁড়িকমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির নামকরণ করা হয়েছে ‘করোনাকাল; অনুভবে ভাবাবেগ’। যেখানে করোনা নিয়ে আমি বিশদ আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
আমরা দেখছি, দিনকে দিন করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। কিন্তু আচরণ বদলাচ্ছে না মানুষ। সবকিছুই চলছে আগের মতো। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। সংক্রমণ রোধের প্রথম ধাপে মাস্ক পরতে বলা হলেও এখনো অনীহা প্রকাশ করছেন বেশির ভাগ মানুষ। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার বিধিনিষেধ জারি করলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না মাঠে। তবে যাই হোক, আমরা যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখতে পাই, হঠাৎ করে করোনার এ ব্যাপক সংক্রমণের জন্য মূলত আমরাই দায়ী। আমাদের বেপরোয়া আচরণ, সবকিছুকে ‘থোড়াই কেয়ার ভাব’, সরকারিভাবে এত আহাজারি করার পরও সামাজিক দূরত্বের পরামর্শ না মানা, জনপরিসরে মাস্ক না পরা, দেশে যে একটা মহামারী চলছে তাকে একেবারেই পাত্তা না দেওয়া, নিজে সংক্রমিত না হওয়া বা অন্যকে সংক্রমিত না করার ন্যূনতম দায়িত্ববোধের অভাব প্রভৃতি আমাদের নতুন করে বিপদের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ এ সংক্রমণের আওতার বাইরে নয়। তরুণদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় তাদের মৃত্যুর হার কম হবে। আর বয়স্কদের শরীরে যেহেতু অন্যান্য রোগ থাকে সুতরাং তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। বড়দেরকে মাস্ক পরতে হবে। যতটা সম্ভব ঘরের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে হবে। শিশুকেও যথাসম্ভব নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত শিশুদেরকে টিকা দেয়ার বিষয়টি গবেষণার পর্যায়ে রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু সংখ্যা সাড়ে নয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ভাইরাসের ব্যাপক সামাজিক সংক্রমণের কারণে এখন দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচুর রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই হাজারো মানুষ আক্রান্ত হওয়ায় মারাত্মক চাপে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে বাংলাদেশে ৬৫৪টি সরকারি এবং ৫০৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর সময় রোগীর চাপ ও আতঙ্কে সাধারণ রোগীরাও অতি জরুরি না হলে হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
করোনাভাইরাস; মৃত্যুর ঘটনা নেই এমন একটি রাষ্ট্রকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাইরাস এখনো সরব। বলা যায়, আগের চেয়ে আরো বেশি ভয়ংকর। আমি মনে করি, আগামী দুই সপ্তাহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে নিজ দায়িত্বে নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের রক্ষা করার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। শত্রু হিসেবে করোনাভাইরাস বেছে বেছে কাউকে আক্রমণ করবে না। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু দেশের প্রতিটি মানুষ। সুতরাং মানুষকেই তার নিজের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে। কারো ওপর দায়ভার ছেড়ে দেওয়াটাই হবে আত্মঘাতী। সেই জন্য দেশের উন্নয়নে এক সুদক্ষ নাবিকের ন্যায় সরকারপ্রধান কাজ করে চলেছেন।
মনে রাখতে হবে, নির্দেশনা মেনে চললে সর্বপ্রথম উপকৃত হবেন তিনিই, যিনি মানবেন। তারপর পরিবার এবং রাষ্ট্র। তাই নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচাতে আসুন আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকে এগিয়ে যাই।
লেখক : চেয়ারম্যান, এলবিয়ন গ্রুপ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইসিএমএবির ভার্চুয়াল সিপিডি অনুষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সচেতনতামূলক প্রচারণা