এগার হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে চট্টগ্রামের ভ্যাট বিভাগ কাজ করলেও শত শত প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই গ্রাহকদের কাছ থেকে ভ্যাট নিলেও তা জমা না দিয়ে নিজেরাই আত্মসাৎ করছে। মিমি সুপার মার্কেটে পরিচালিত এক সমীক্ষায় ৭৮ শতাংশ ব্যবসায়ীর ভ্যাট না দেয়ার তথ্য উদঘাটিত হয়। চট্টগ্রামে ভ্যাট ফাঁকির বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগ। চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র এই চট্টগ্রাম। সারাদেশের রাজস্ব আয়ের এক তৃতীয়াংশেরই যোগান দেয়া হয় চট্টগ্রাম থেকে। চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম থেকে অন্তত এক লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এরমধ্যে ভ্যাট থেকে রয়েছে এগার হাজার কোটি টাকা। যে কোন পণ্য ও সেবা বিক্রির খাত থেকে নির্ধারিত ভ্যাট আদায় করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পরিচালিত আমদানি কার্যক্রমে গত বছর ৪৭ হাজার কোটি টাকার শুল্ক পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের চারটি আয়কর বিভাগ থেকে গত বছর রাজস্ব এসেছে প্রায় চৌদ্দ হাজার চারশ’ কোটি টাকা। আর ভ্যাট আদায় হয়েছে দশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা। দেশের রাজস্ব আয়ের প্রধান মাধ্যম আমদানি বাণিজ্যের প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং ইনকাম ট্যাক্স থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের প্রায় সমান রাজস্ব আদায় হয় ভ্যাট থেকে। উক্ত তথ্য থেকেই ভ্যাটের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মন্তব্য করেছেন। তাঁরা বলেছেন, দেশের রাজস্ব আায়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
চলতি ২০২০-২০২১ সালে এগার হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মাঠে রয়েছে ভ্যাট বিভাগ। কিন্তু শত শত প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির মাঝে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনার এনামুল হক দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২১ হাজার ৪৭৪টি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভ্যাট আদায় হয়েছে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বকেয়া আদায় করা হয়। চলতি অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকা। তবে এই লক্ষ্য অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে গত মার্চ থেকে মারাত্মক এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি দীর্ঘ কয়েক মাস ব্যবসা বন্ধ থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা নানাভাবে ভ্যাট আদায় বৃদ্ধির চেষ্টা করছি।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চট্টগ্রামে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। কয়েক হাজার ব্যবসায়ী শত শত কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছেন। নিবন্ধন করেও ভ্যাট দেন না অনেক ব্যবসায়ী। দিনের পর দিন তারা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছেন।
এনবিআর’র নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মঈন খান ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মিমি সুপার মার্কেটে অভিযান চালিয়ে আমরা দেখেছিলাম যে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান তো দূরের কথা, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৭৮ শতাংশ ভ্যাট দেয় না। গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ভ্যাট আদায় করলেও তারা তা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেন। ইতোমধ্যে এধরনের অসংখ্য ঘটনা আমরা উদঘাটন করেছি। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করেছি।
ভ্যাট ফাঁকির কথা স্বীকার করে ড. মঈন খান বলেন, সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিয়েছি। তারপরও বহু প্রতিষ্ঠান ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। আমরা গোপনে অনুসন্ধান শুরু করেছি। আমাদের গোয়েন্দা টিম চট্টগ্রামে কাজ করছে। অচিরেই আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি উদঘাটন করা হবে।