প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ভোটের দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করা হবে। সেই হিসেবে ৫৫ দিন হয় বা ৬০ দিন আগেই তফসিল হবে। এই মুহূর্তে ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা সম্ভব নয়। তবে নির্বাচন যখনই হোক কমিশন প্রস্তুত রয়েছে।
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকের পর যে যৌথ ঘোষণা এসেছে তা সরকারি নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। ঈদের ছুটি শেষে গতকাল রোববার প্রথম কর্মদিবসে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যৌথ ঘোষণায় কারো সই নেই, থাকলে বলা যেত এটি সরকারিভাবে এসেছে। তিনি বলেন, ভোটের আট–দশ মাস আগে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এ মুহূর্তে ঘোষণা সম্ভব নয়।
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, এখন আবার নতুন মাত্রা এসেছে। লন্ডনে যে ঘোষণাটা এসেছে অন্যদের মতো সংবাদমাধ্যম থেকে যেটুকু জানা, এর বাইরে কিছু নেই। এ নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না। ভেতরে কি আলাপ হয়েছে। শুধু যৌথ বিবৃতি যেটা দিয়েছে সেটা তো আন–সাইনড; এটাই বা কতটুকু জেনুইন, তাও তো জানি না। কারো স্বাক্ষর থাকলে বুঝতাম এটা সরকারের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে বুঝতাম এটা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
নাসির উদ্দিন বলেন, অফিসিয়ালি কোনো কিছু না এলে কিছু করা যাবে না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে, আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে। ঘোষণা একটা হয়েছে, নিশ্চয়ই ভেতরে অনেক আলাপ হয়েছে। …সেগুলোও আমাদের জানতে হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।
নিরাপত্তা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিরাপত্তা উপদেষ্টা একটা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, ইসি হয়ত একটা তারিখ ঘোষণা করবে।…এটা, একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। বিশেষ ধরনের সরকার, বিশেষ ধরনের পরিস্থিতি, একদিকে সরকার বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে; সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করছে। বিচারটা বিচারকের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, তবে ত্বরান্বিত করার বিষয় রয়েছে, এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সংস্কারের বিষয় রয়েছে। এসব নিয়ে সরকারই আলোচনা করছে। আমাদের ধারণা, সরকারের পক্ষ থেকে একটা তারিখ ঘোষণা হবে। কিন্তু লন্ডন সফরের পরে দায়–দায়িত্ব কিছুটা আমাদের ওপরই আসছে।
সরকারের সঙ্গে আলোচনা না হলে নির্বাচনের তারিখ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে না তুলে ধরে সিইসি বলেন, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের যে সময়েই নির্বাচন হোক না কেন নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে হোক বা এপ্রিলে হোক জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আগে আমাদের বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে জুন, আমরা সে সময় মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি ও এগিয়ে যাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা এখনও প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। সরকারের সাথে আমাদের যখন কথাবার্তা হবে, কি ধরনের চিন্তাভাবনা করছে, তখন আমরা ধারণা পাব, তখন সিদ্ধান্তে আসতে পারব। তারিখ নিয়ে, অমুক দিন অমুক তারিখে নির্বাচন হবে, এ মুহূর্তে আমি এমন ঘোষণা পারব না। সরকারে কাছ থেকে যদি ধারণা পাই তাহলে সে অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত আছি এবং প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ছয় মাস আট মাস আগে তফসিল হয় না : এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, (ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন) এটা এখনও আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনি আইন আরপিও অনুযায়ী ইসি গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে। ছয় মাস, আট মাস আগে ওই তারিখে নির্বাচন হবে–এটা বলার বিধান আরপিওতে নেই।
তফসিল কবে? : ভোটের ৫০–৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণার আভাস দেন সিইসি। তিনি বলেন, যেদিন তফসিল ঘোষণা করব তখন ভোটার তালিকা প্রস্তুত থাকতে হবে। যে তারিখে আমি তফসিল ঘোষণা করব, যেদিন নির্বাচনের তারিখ হয় তার মাস দুয়েক আগে তফসিল হয়। ৫০–৬০ দিন আগে হবে।
সামনের কাজগুলোর বিষয়ে সিইসি বলেন, ভোটার তালিকা আইনে সংশোধন করা হবে, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত প্রায়। দল নিবন্ধন ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের মতো বড় কাজ রয়েছে। তফসিল কবে? জবাবে তিনি বলেন, এতদিন তো সরকারই আলোচনা করেছে, আমরা তো আলোচনা করিনি। উনাদের অবস্থানটা আমাদের বুঝতে হবে। বোঝার পরে যেদিন তারিখ ঠিক হবে, প্রায় দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা হবে। ঐতিহাসিকভাবে তা–ই, ৫৫ থেকে ৬০ দিন আগে তফসিল; তখন আমরা ঘোষণা করব।
প্রস্তুতি শয়নে–স্বপনে : এক প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারের সাথে আমাদের এখনও কথা হয়নি। আমরা এখন আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যখনই হয় যেন আমরা নির্বাচনটা আয়োজন করতে পারি। আমি এখন আমার প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। এখন আমাদের ধ্যান ধারণা শয়নে স্বপনে নিজেদের প্রস্তুতি।
তিনি বলেন, সিইসি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তারিখ ঘোষণা করেন। দশ মাস আগে তারিখ ঘোষণা করে এমন দেখেছেন কখনো? আমরা এখনও কোনো লক্ষ্য ঠিক করিনি। সরকারের সাথে আমাদের যখন কথাবার্তা হবে, কি ধরনের চিন্তাভাবনা করছে, তখন আমরা ধারণা পাব, তখন সিদ্ধান্তে আসতে পারব।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, প্রয়োজন হলে দেখা করতে পারেন তারা। সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। সবকিছু বৈঠক করে হবে এমন নয়, বিভিন্ন মাধ্যমেও হয়ে থাকে। সরকারের সহযোগিতা লাগবে। সরকার আলোচনা করছে, আলোচনার অগ্রগতি, ভিত্তি কি, চিন্তাভাবনা, আমাদের বুঝতে হবে। ভিডিও দেখে তো সিদ্ধান্তে আসতে পারছি না। আলোচনাটা সব সময় ওখানে করছে। ভেতরের অন্দর মহলের বিষয়টি বুঝতে হবে।
সমালোচনাকে স্বাগত জানাই : ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়া, আল্লাহ তাদের আস্থায় নিয়ে আসো। আমার বিশ্বাস, আমাদের দলগুলো দেশের মঙ্গল চায়। রাজনৈতিকভাবে অনেক কথা বলতে হয়, আমি এটাকে রাজনৈতিকভাবে দেখি। রাজনৈতিক সচেতন থাকবেন, দলীয় রাজনীতিতে জড়াবেন না–এমন নির্দেশনা কর্মকর্তাদের দিয়েছি। ইসির বিরুদ্ধে বললে একদম আহত হন না দাবি করে তিনি বলেন, সমালোচনাকে স্বাগত জানাই।
ইসির কঠোর নির্দেশনা : নির্বাচনে কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার বিষয়টি বারবার স্মরণ করে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন সিইসি। আমরা কারো নির্দেশনায় কাজ করি না। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, দলীয় স্বার্থ রক্ষার জন্যে কাজ না করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইন অনুযায়ী কাজ করার জন্য বলা হয়েছে তুলে ধরে তিনি বলেন, অতীতে যা হয়েছে, কেউ যদি মনে করে কেন্দ্র দখল, বাক্স লুট করবে, তা দিবাস্বপ্ন। সে সুযোগ এবার আর পাবে না, এটা করতে দেব না ইনশাআল্লাহ। সবাই সুন্দর নির্বাচন চায়।