দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের মোট ভোটারের ৬৯ শতাংশ উপজেলা বা গ্রামের বাসিন্দা। বৃহৎ অংশ থাকায় ভোট উৎসব বেশি ‘জমজমাট’ হবে গ্রামে। আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠেয় এ ভোট উৎসবে যোগ দিতে গত কয়েকদিন ধরে নগর ছাড়ছেন শহরে বসবাসরত গ্রামের ভোটাররা। তিন দিনের লম্বা ছুটি থাকায় সাথে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। ফলে ভোটকে ঘিরে গ্রামে বেড়েছে মানুষের পদচারণা।
ভোট উৎসবকে ঘিরে ইতোমধ্যে শহর ছেড়ে যাওয়া অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয় আজাদীর। তারা জানান, শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা তিন দিন ছুটি রয়েছে। সাধারণত ঈদে এমন লম্বা ছুটি পাওয়া যায়। তাই ভোটকে ঘিরে পাওয়া ছুটি কোনোভাবেই মিস করতে চান না তারা। তাই বন্ধের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভোট দেয়ার পাশাপাশি এলাকার মানুষের সঙ্গে দেখা–সাক্ষাৎ ও আড্ডা দেয়ার ইচ্ছে থেকে তারা পরিবার–পরিজন নিয়ে ছুটেছেন গ্রামে। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসনে উপজেলার ভোটার রয়েছে। তিনটি আসনের সব ভোটারই সিটি কর্পোরেশন এলাকার বা নগরের। অবশ্য যে ১৩টি আসনে উপজেলার ভোটার রয়েছে তার মধ্যে তিনটি আসনের আংশিক শহরের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এখানে শহরের ভোটারও রয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মোট ভোটার ৬৩ লক্ষ ১৪ হাজার ৩৯৭ জন। এর মধ্যে শহরের ভোটার রয়েছেন ১৯ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯৩৮ জন। উপজেলার ভোটার রযেছেন উপজেলার ভোটার ৪৩ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৫৯ জন।
উপজেলার মধ্যে চট্টগ্রাম–১ (মিরসরাই) আসনে ৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫২৫ জন, চট্টগ্রাম–২ (ফটিকছড়ি) আসনে ৪ লক্ষ ৫৬ হাজার ৪৮৭ জন, চট্টগ্রাম–৩ (সন্দ্বীপ) আসনে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৯১৪ জন, চট্টগ্রাম–৬ (রাউজান) আসনে ৩ লক্ষ ১৬ হাজার ৯২০ জন, চট্টগ্রাম–৭ (রাঙ্গুনিয়া উপজেলা এবং বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর–খরনদ্বীপ ইউনিয়ন) আসনে ৩ লক্ষ ১৩ হাজার ৯১ জন, চট্টগ্রাম–১২ (পটিয়া) আসনে ৩ লক্ষ ২৯ হাজার ৪২৮ জন, চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা ও কর্ণফুলী) আসনে ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৬৪ জন, চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ উপজেলা ও সাতকানিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন) আসনে ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ২৯৩ জন, চট্টগ্রাম–১৫ (লোহাগাড়া ও ৬টি ইউনিয়ন ব্যতীত সাতকানিয়া উপজেলা) আসনে ৪ লক্ষ ৫৮ হাজার ৪১১ জন এবং চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসনের ভোটার ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ৭৭৫ জন। এছাড়া শহর ও উপজেলার ভোটার থাকা তিনটি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম–৮ আসনে বোয়ালখালী উপজেলার ১ লক্ষ ৮৯ হাজার জন, চট্টগ্রাম–৪ আসনে সীতাকুণ্ড উপজেলার ৩ লক্ষ ২০ হাজার ১৯৩ জন এবং চট্টগ্রাম–৫ আসনে হাটহাজারী উপজেলার ভোটার আছেন ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৫১৮ জন।
এদিকে শহরের তিনটি আসনের মধ্যে চট্টগ্রাম–৯ (চসিকের ১৪টি ওয়ার্ড অর্ন্তভুক্ত) আসনে ৪ লক্ষ ৯ হাজার ৫৭৬ জন, চট্টগ্রাম–১০ আসনে (চসিকের ৮টি ওয়ার্ড অর্ন্তভুক্ত) ৪ লক্ষ ৮৫ হাজার ৮০৩ জন এবং চট্টগ্রাম–১১ আসনে (চসিকের ১০টি ওয়ার্ড) আসনে ভোটার ৫ লক্ষ ১ হাজার ৮৫২ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম–৮ আসনে নগরের চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ থানার ৩ লক্ষ২৬ হাজার ৫৫৩ জন, চট্টগ্রাম–৪ আসনে নগরের পাহাড়তলী ও আকবর শাহ থানার ১ লক্ষ ৬ হাজার ৯৭৯ জন এবং চট্টগ্রাম–৫ আসনে বায়েজিদ থানার ১ লক্ষ ২৪ হাজার ১৯৫ জন ভোটার রয়েছেন। জানা গেছে, নগরে ভোটার সংখ্যা কম হলেও নাগরিক সুযোগ–সুবিধা বেশি থাকায় এবং কর্মসূত্রে উপজেলার আনুমানিক কয়েক লক্ষ লোক চট্টগ্রাম শহরে বসবাস করেন। যারা কোনো উপলক্ষে ছুটি পেলে ছুটে যান গ্রামে। ভোটকে কেন্দ্র করে তিনদিনের ছুটি তাদের সামনে সে সুযোগ এসেছে। তাই তারা গ্রামে যাচ্ছেন।
রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা ও নগরে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোজাফ্ফর আহমেদ আজাদীকে বলেন, ভোটের দিন রোববার তো ছুটি। আগের দুইদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই বৃহষ্পতিবার অফিস শেষ করেই বাড়ির পথে ছুটেছি। ভোটও দেব সাথে এলাকার মানুষজনের সাথেও সাক্ষাৎ হল।
রাউজানের ভোটার নোটন আজাদীকে বলেন, কর্ম সূত্রে শহরে থাকি। কিন্তু আমি রাউজানের ভোটার। ছুটি থাকায় ভোট দিতে আগেভাগেই বাড়ি চলে আসলাম। ঢাকায় থাকে এমন কয়েকজন বন্ধুও এসেছে ভোট উপলক্ষে। অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগছে। সবুজ নামে চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত সন্দ্বীপের এক বাসিন্দা বলেন, ভোটার বেশি গ্রামে। তাই ভোটের জমজমাট উৎসবও হবে গ্রামে। এ উৎসব মিস করা ঠিক হবে না। তাই সন্দ্বীপ চলে আসছি।
জানা গেছে, উপজেলার সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থীদের অনেকেই শহরে বসবাসরত নিজ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সেখানে তারা গ্রামে উপস্থিত হয়ে ভোট দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটারদের অনুরোধ জানিয়েছেন। এতেও উদ্বুদ্ধুৃ হয়েও অনেকে ছুটছেন গ্রামে।