গত তিন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে গঠিত জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের সদস্যরা গতকাল চট্টগ্রামে তিন দফায় শুনানি গ্রহণ করেছেন। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিন দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে গতকালের শুনানিতে হাজির হয়েছেন ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী) আসনের এক প্রার্থী এবং দুপুরে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে রিটানিং কর্মকর্তা তখনকার চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মো. আবদুল মান্নান, সহকারী রিটার্নিং অফিসার তৎকালীন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বর্তমান বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
ওই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ছাড়াও প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট এবং পুলিশ সদস্যরাও হাজির হয়েছেন। শুনানি কার্যক্রম পরিচালনা করেন জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের সদস্য (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদা) তাজরিয়ান আকরাম হোসেন ও ড. মো. আব্দুল আলীম। তাদের সাথে তদন্ত কমিশনের আইন ও গবেষণা কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন ও মো. সোয়েবুর রহমান এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল মোমিন সরকার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
শুনানিকালে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বাইরে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী) আসনে ২০১৪ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শুধুমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট মোহাম্মদ রফিকুল আলম ছাড়া বাকি কোনো প্রার্থী উপস্থিত হননি। তিনি কমিশনের কাছে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
এদিকে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে রিটার্নিং ও পরে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ কর্মকর্তাদের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
দুপুরের শুনানিতে চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে দায়িত্ব পালন করা তখনকার পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে শুনানিতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
এক কর্মকর্তা জানান, শুনানিতে চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনের তখনকার রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল মান্নানের কাছে ২০১৮ সালের ভোটের নানা অনিয়ম, কারচুপি বিষয়ে জানতে চেয়েছে তদন্ত কমিশন। একই শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। তাকে নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলেও তিনি কোনো অনিয়ম হয়নি বলে জানান।
শুনানি শেষে বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন সাংবদিকদের মুখোমুখি না হয়ে চলে যান।
তবে সাবেক বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদেরকে কমিশন ডেকেছে; আমরা কমিশনের ডাকে এসেছি। আমরা কিছু জানি না। আমি অবসরে চলে গেছি, এই মুহূর্তে আলোচনায় আসতে চাই না। কমিশন কি জানতে চেয়েছে আপনার কাছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে চট্টগ্রাম–১১ সংসদীয় আসনে এতো যে অনিয়ম, কারচুপি হলো আপনি কি করলেন? আমি বলেছি– আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি অনিয়ম ঠেকাতে। আমি একটা কেন্দ্রে তাৎক্ষণিকভাবে ভোট বাতিল করেছি। আমি সেটার কাগজও কমিশনকে দিয়েছি। কিন্তু শতভাগ আটকাতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। আগামীতে যেন এমন নির্বাচন আর না হয়। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে যেন সামনে ভালো নির্বাচন হয় এটাই চাই।
এরপর তদন্ত কমিশনের শুনানিতে তখনকার নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশদের সাথে শুনানি শেষে তদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়– আমাদের তদন্ত এখনও চলমান।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশন গত দুটি নির্বাচনের সকলের সাথে কথা বলেছে। শুনানিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তদন্ত কমিশন।
আজ শনিবার চট্টগ্রাম–৫ আসনে ২০২৪ সালের দায়িত্বপালনকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার (যেকোন ৫ জন), সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার (যেকোন ৫ জন), পোলিং এজেন্টকে (যেকোন ৫ জন) ডেকেছে নির্বাচন তদন্ত কমিশন।
উল্লেখ্য, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে শুনানি গ্রহণ শুরু করেছে জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশন।












