চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ পূর্ণ হয়েছে তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য আবেদন করে ভোটার হতে পারবেন। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের বৈঠক শেষে এমন ঘোষণার পর অন্যান্য এলাকার ন্যায় কক্সবাজারের চকরিয়ায়ও ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে ভিড় করতে দেখা গেছে আগ্রহীদের। আজ বৃহস্পতিবার অফিস সময় শেষ হওয়া পর্যন্তও জমা নেওয়া হবে কাগজপত্র।
নির্বাচন কমিশন সচিবের এমন নির্দেশনার লিখিত কপি এখনো চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসে পৌঁছায়নি। গণমাধ্যমে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর গত দুইদিন ধরে নতুন ভোটার হতে ইচ্ছুকদের কাগজপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে। তবে কমিশনের এমন নির্দেশনা গণমাধ্যমে পাওয়ার পর ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হতে অনেকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করলেও প্রথমদিকে তাদের ফেরত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তবে গত তিনদিন ধরে ভোটার ফরম জমা নেওয়ার খবরে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ভোটার হতে আগ্রহীরা।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রধান সহকারি মো. নুরুল হুদা দৈনিক আজাদীকে জানান, নির্বাচন কমিশন সচিবের নির্দেশনার পর গত দুইদিনে নতুন করে ভোটার হওয়ার জন্য ভিড় করেছেন শত শত আগ্রহী। এদের মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছেন নারী–পুরুষ শিক্ষার্থী। আবার বিদেশ যাওয়ার জন্যও অনেকের এনআইডির প্রয়োজন হওয়ায় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। গত দুইদিনে ফরম জমা দিয়েছেন প্রায় ২০০ জন। ফরম জমা নেওয়ার সময় একটি করে স্লিপ সরবরাহ দেওয়া হয়েছে তাদের। যাতে তাদের মোবাইল ফোনে বার্তা যাওয়ার পর নির্দিষ্ট তারিখে ছবি তোলা, বায়োমেট্রিক নেওয়াসহ যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করা হয়।
প্রধান সহকারি জানান, ইতোপূর্বে জমা নেওয়া প্রায় ৪০০ জন নতুন ভোটারের ছবি তোলা, বায়োমেট্রিকসহ নানা তথ্য–উপাত্ত নেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। এরই মাঝে নেওয়া হচ্ছে নতুন করে ভোটার হওয়ার জন্য কাগজপত্র। কিন্তু জনবল সংকট থাকায় ভোটার হতে ইচ্ছুকদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের। এরপরও সেবা দেওয়া হচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে।
নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদনকারী চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের গাবতলী বাজারের কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুল হাসান নিশাদ বলেন, অনেক সময় এনআইডি কার্ড ছাড়া কোনো কাজই করা সম্ভব হয় না। তাই ভোটার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হওয়ার জন্য সমদুয় কাগজপত্র তৈরি করে গত তিনদিন ধরে ঘুরেছি নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তবে ফরম জমা নিচ্ছে শুনে আজ (গতকাল) বুধবার সকালেও যাই। অবশেষে আমার ফরম জমা দিতে পেরে বেশ খুশি লাগছে। কয়েকজন প্রার্থী আজাদীকে বলেন, একনাগাড়ে তিনদিন ধরে ফরম জমা দেওয়ার জন্য ঘুরেছি। অনেকের দ্বারস্থও হয়েছি ফরম জমা দিতে। কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলাম। অবশেষে ফরম জমা নেওয়া শুরু করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইরফান উদ্দিন বলেন, যাদের বয়স ইতোমধ্যে ১৮ পূর্ণ হয়ে গেছে, ভোটার হওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে কাগজপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে। সাথে প্রবাসী এবং প্রবাসে যেতে ইচ্ছুকদেরও কাগজপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা ভোটার হতে পারে। এজন্য কার্যালয়ের নিচতলায় একটি ডেস্ক চালু রয়েছে। নতুন করে ভোটার করার বিষয়ে কমিশন সচিব মহোদয়ের নির্দেশনার লিখিত কপি এখনো আমার দপ্তরে পৌঁছেনি। এরপরও গণমাধ্যমে বিষয়টি জানার পর কাগজপত্র জমা নেওয়া হচ্ছে নতুন করে ভোটার হতে ইচ্ছুকদের। এই কার্যক্রম চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। এরপর আর কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাংগীর আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, যেহেতু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে, সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটারের যোগ্য হয়েছিলেন কিন্তু ভোটার হতে পারেননি, তাদের ভোটার হওয়ার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে।