ভোট বর্জন ছাত্রদলসহ পাঁচ প্যানেলের

জাকসু নির্বাচন । ভোট পড়েছে ৬৭ শতাংশ

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

আটটি প্যানেলের মধ্যে পাঁচটি প্যানেল ও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোট বর্জন ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অনাস্থা এবং বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মের অভিযোগের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের ভোট শেষ হয়েছে। প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ২১টি হলে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ বড় ধরনের কোনো গোলযোগ ছাড়াই বিকাল ৫টায় শেষ হয়। ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। ভোট গণনা শুরু হয় রাত ১০টার পরে। ফলাফল পেতে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক রশিদুল আলম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা করা হবে। তাই ফলাফল পেতে শুক্রবার সকাল বা দুপুর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কয়েকটি হলে ভোটারের দীর্ঘ লাইন থাকায় নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোটগ্রহণ করা হয়। সবশেষ রাত সাড়ে ৭টার দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর হলগুলো থেকে ব্যালট বাঙ কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সিনেট ভবনে নিয়ে আসা হয়। এখান থেকেই গণনা শেষ করে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে সিনেট ভবন ঘিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসজুড়েই রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে ক্যাম্পাসের গেইটগুলোতে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের দেখা গেছে। সিনেট ভবনে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, রাত ১০টার পরে ভোট গণনা হয়। প্রথমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের ব্যালট বাঙ খুলে ভোট গণনা শুরু হয়। দুটি হল করে প্রথমে হল সংসদের ভোট গণনা হবে, তারপর কেন্দ্রীয় সংসদের ভোট গণনা হবে। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৫ জন।

বর্জনের ঘোষণা যাদের : ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার দেড় ঘণ্টা আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী। এ সময় তার পাশে প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ সাদি হাসানও ছিলেন।

বৈশাখী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভোটকেন্দ্র মনিটর করার জন্য জামায়াত নেতার কোম্পানি ঘিরে টেলিকাস্টসহ ভিডিও ক্যামেরা সাপ্লাই দিয়ে সিসি টিভির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো ভোটকেন্দ্র শিবিরকে মনিটর করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিজয় ব্যাহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের রায়ের সত্যিকার প্রতিফলন ঘটছে না। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি।

এরপর জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানায় ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) সমর্থিত সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মুরাদ চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই অনাস্থার কথা জানান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।

পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও ছাত্রশিবিরকে ভোট জালিয়াতিতে সহযোগিতার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেল। একই অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন ও পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেলের প্রার্থীরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও ঘোষণা দিয়েছেন ভোট বর্জনের।

এছাড়া নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক। তারা হলেন, গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম ও অধ্যাপক শামিমা সুলতানা। বিকালে জাকসু নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে নির্বাচন বর্জনের কথা জানান তারা।

ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকাল থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নানা অসংগতি ও অনিয়মের কথা বলছিলেন। কিন্তু ভোট কারচুপির সরাসরি অভিযোগ কারও ছিল না। তারা কেন্দ্রে ভোটের চেয়ে ব্যালট বেশি যাওয়া, প্রতিপক্ষের আচরণবিধি ভঙ্গ করা, জামায়াত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করা, পোলিং এজেন্টের অনুমতি থাকলেও তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া, ডোপটেস্টের ফলাফল না আসা, নির্বাচনকে ‘ম্যানিপুলেট’ করার নানা অভিযোগ আসছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবকেয়া গৃহকর ও ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায়ে চসিকের অভিযান
পরবর্তী নিবন্ধসশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ বাড়লো আরও ৬০ দিন