যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ করে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে ভোট সম্পর্কে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর নানা পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো তথ্যপ্রমাণ না দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বক্তৃতা-বিবৃতিতে এরকম বেশ কয়েকটি পোস্টের কথা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প ও তার প্রচারণা শিবির। এরকম পাঁচটি অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে বিবিসির রিয়েলিটি চেক টিম।
মিশিগানে মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোট দেওয়া হয়েছিল : টুইটারে ভাইরাল হওয়া বার্তায় দাবি করা হয়, মিশিগানে মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোট দেওয়া হয়েছে। এসব দাবিকে ভুল তথ্য জানিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে মিশিগানের কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তিদের নামে কোনো ভোট এলে সেটা বাতিল করে দেওয়া হয়। মৃত ব্যক্তিদের নামে ভোট দেওয়ার আরও কয়েকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা ও ছেলের নাম এক থাকায় এরকম বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আবার প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেও এমন ঘটেছে।
মিশিগানে সফটওয়্যারে ভুল ছিল না : অনলাইনে একটি পোস্ট অসংখ্যবার শেয়ার করা হয়েছে, মিশিগানে কম্পিউটারের একটি সফটওয়্যারের ভুলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে জমা পড়া ভোট জো বাইডেনের নামে গণনা করা হয়েছে। রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজের একটি টুইট, যা ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় টুইট করেছিলেন।
শুধুমাত্র একটি কাউন্টিতে প্রাথমিকভাবে এরকম একটি সমস্যা হয়েছিল, যেখানে ভোট ভুলক্রমে বাইডেনের নামে জমা পড়েছিল। মিশিগানের সেক্রেটারি অব স্টেট জোসেলিন বেনসন জানিয়েছেন, দ্রুত সেটা ধরা পড়ে এবং সংশোধন করা হয়। তিনি জানান, প্রাথমিক এই ভুল মানুষের, সফটওয়্যারের নয়। পোস্টে দাবি করা হয়, মিশিগানের ৪৭টি কাউন্টিতে একই ধরনের সমস্যা হতে পারে। বেনসন বলেছেন, এরকম কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
শার্পি কালির ভোট বাতিল হয়নি : আরেকটি ব্যাটেলগ্রাউন্ড অ্যারিজোনায় গুজব ছিল, রিপাবলিকান ভোটারদের ভোট দেওয়ার সময় শার্পি কলম (পার্মানেন্ট মার্কারের একটি ব্রান্ড) দেওয়া হয়েছিল। ভিডিওতে এক নারী বলেন, এই ধরনের কালিতে দেওয়া ভোট মেশিনগুলো পড়তে পারে না। কিন্তু এই দাবি মিথ্যা। মারিকোপা কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শার্পি কলম ব্যবহারের কারণে কোনো ভোট বাতিল হয় না।
মিশিগানের ভুল ভোট মানচিত্র : নির্বাচনের রাতে ছড়িয়ে পড়া মিশিগানের একটি ভোট মানচিত্রে দেখা যায়, হঠাৎ করে বাইডেনের জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার ভোট বেড়ে গেছে। ট্রাম্পের জন্য কোনো ভোট বাড়েনি। সামাজিক মাধ্যমে এটি ভাইরাল হয়। ছবিটি ট্রাম্প নিজেও শেয়ার করেছেন।
এটা আসলে সাধারণ ঘটনা। রাজ্য কর্মকর্তা গণনা হওয়া ভোটের বড় একেকটি অংশ একেকবারে যোগ করেন। প্রশ্ন হলো, এই আপডেটে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট জমা হয়নি কেন। উত্তর হলো : এটা ছিল তথ্য অন্তর্ভুক্তির একটি ভুল, যা পরে সংশোধন করা হয়।
এ বিষয়ে মিশিগানের ব্যুরো অব ইলেকশন বলেছে, তথ্য গরমিল নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করবে না। তবে জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল এখনো অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে রয়েছে এবং চূড়ান্ত গণনা সম্পন্ন হয়নি।
তালিকাভুক্তির চেয়ে উইসকনসিনে বেশি ভোটার নেই : ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি মিথ্যা দাবি হলো, উইসকনসিনে যতজন ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছেন, তাদের চেয়ে বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ভোটার সংখ্যার তথ্যটি পুরনো। গত কয়েক বছরের তুলনায় উইসকনসিনে ভোট পড়ার হার এই বছর বেশি। এই অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের দিনও একজন নিজেকে ভোটার হিসাবে তালিকাভুক্ত করতে পারেন। এর মানে হলো তালিকাভুক্ত ভোটারের সর্বশেষ যে সংখ্যাটি পাওয়া যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন সেই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।