সরবরাহ সংকটের অজুহাতে আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের বাজার। অনেকদিন ধরেই তেল, চাল ও চিনির বাজার চড়া। তবে আমদানি বাড়ায় পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমে এলেও খুচরা বাজারে খুব একটা প্রভাব পড়ছে না। অপরদিকে বেড়েছে আদা ও রসুনের দামও। গত সপ্তাহে কয়েক দফা বেড়ে এখন স্থিতিশীল রয়েছে ডালের বাজার। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অনেকগুলো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। বর্তমানে প্রায় সব পণ্যের দাম কেজিতে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি। এর ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণি আরেক দফা চাপের মুখে পড়েছে। গতকাল নগরীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে রূপচাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল এক লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। যা গত এক মাসে আগেও ছিল ১১০ টাকা। এছাড়া ২ লিটার বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা, ৩ লিটার ৩৬০ টাকা এবং ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৫৮৫ টাকায়। তেলের পাশাপাশি বেড়েছে চিনির দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকায়। এছাড়া মশুর ডাল চিকন দানা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা এবং মোটা দানা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। ভারতীয় আদা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা এবং চীনা আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। অপরদিকে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। যা গত এক মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকায়। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে আমদানি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও খুচরা বাজারে দামের খুব একটা হেরফের হয়নি। খুচরা বাজারে এখনো পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়।
সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় আবারও উঠে এসেছে চাল। এবার কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠার ছিটেফোঁটা প্রভাবও ছিল না বাজারে। ফলে বাধ্য হয়ে সরকার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির অনুমতি দেয়। ফলে ব্যবসায়ীরা এখন ২৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করেই চাল আমদানি করতে পারবেন। শুল্ক কমানোর প্রভাব চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে এখনো বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। বর্তমানে জিরাশাইল চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ৭০ টাকা, মিনিকেট আতপ ৬০ টাকা, মোটা সিদ্ধ চাল ৫২ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
কাজীর দেউরি এলাকার ভান্ডার স্টোরের খুচরা বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। পাইকারি দোকানদাররা আমাদের জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার সব ধরনের পণ্যের বুকিং দর বেড়ে গেছে। পাইকারি বাজারে দাম কমে গেলে খুচরাতেও কমে যাবে।
বেসরকারি চাকরিজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, করোনার কারণে আমাদের বেতন কিন্তু এক টাকাও বাড়েনি। উপায়ন্তর না দেখে পরিবার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন আবার বেড়ে যাচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এভাবে চলতে থাকলে, কী হবে বুঝতে পারছি না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাত দাঁড় করিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটায় ব্যস্ত রয়েছেন। কখনো তারা পেঁয়াজ নিয়ে খেলেন, কখনো তেল-চিনি নিয়ে। এখন খেলছেন আবার চালের বাজার নিয়ে। কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ১ ডলার বাড়লেও সাথে সাথে তারা দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ যেসব পণ্যের দাম তারা বাড়িয়ে দেন, সেগুলো কিন্তু আগে আমদানি করা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং রেট কমে গেলে তখন কিন্তু তারা পাইকারি বাজারে দাম কমিয়ে দেন না। এতে বুঝা যায়, ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবসায়ীদের মর্জিতেই চলে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিত্র অনেকটা একই। অন্যদিকে যাদের বাজার মনিটরিং করার কথা, তারা সেভাবে মাঠে নেই। এর প্রভাবে কিন্তু ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা সুবিধাটা নিয়ে থাকেন।