পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য কোনো অজুহাত লাগে না। যে কোনো সময়ে হুড়হুড় করে বেড়ে যেতে পারে সব ধরনের পণ্যের দাম। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, আটা, আদা, রসুন, এলাচ, শুকনা মরিচ, ভোজ্যতেলসহ ১০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম এখন বাড়তি। মৌসুমে সব ধরনের সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম চড়া। এতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছেই। তারা বলছেন, বাজারে খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট নেই। চাহিদার সবটুকু পাওয়া যাচ্ছে, তারপরও দাম বেশি। কারণ বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা নেই। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কাটছে। এমতাবস্থায় একটা মওকা পেয়ে বসেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাঁরা মোখার অজুহাতে দাম বাড়ালেন সব ধরনের পণ্যের। এমনকি সবজিরও। গত ১৫ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র অজুহাতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সবজি। গত দুইদিনের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০–২০ টাকা পর্যন্ত। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর থেকে সবজির সরবরাহ কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। ভোক্তারা বলছেন, বাজার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য কারসাজির মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
নগরীর কাজীর দেউড়ি এবং ব্যাটারি গলি কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিকেজি কাঁকরল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গত দুইদিন আগে বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা দরে। শসার কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। এছাড়া বেগুনের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। শিম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, মূলা ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, লাউ ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম ১৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, বরবটি ১০ টাকা বেড়ে গিয়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে পটল কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে গিয়ে ৮০ টাকা, পেঁপে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা, চালকুমড়া ১০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা এবং ঢেঁড়স কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকা এবং টমেটো ১০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। কাঁচা মরিচ কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা।
কাজীর দেউড়ি বাজারে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, সাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর পর দেশের উত্তরাঞ্চলসহ চট্টগ্রামের স্থানীয় উপজেলাগুলো থেকে সবজি আসার পরিমাণ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে। আসলে কাঁচাপণ্যের বাজার কখনো ঠিক থাকে না। এক সপ্তাহে বাড়ে তো আরেক সপ্তাহে কমে। কাজীর দেউড়ি বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন উপলক্ষকে পুঁজি করে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন। অথচ এই সময়ে প্রশাসনের কোনো অভিযান লক্ষ্য করা যায় না।
বাজারের অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাজার চলছে ইচ্ছেমতো। এতে কর্তৃপক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সাধারণত পণ্যের সংকট থাকলে দাম বাড়ে। কিন্তু দেশে এখন খাদ্যপণ্যের কোনো সংকট না থাকলেও দাম বাড়ছে, এমনকি আমদানিকৃত যে পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে, দেশের বাজারে সে পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে স্বল্পআয়ের মানুষ বাজারে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছে। তারা প্রয়োজনীয় পণ্য না কিনেই ফিরে যাচ্ছে। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে খোদ শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেছেন, মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে। পরিস্থিতি অনেকটাই তাই। এ পরিস্থিতির জন্য শুধু বৈশ্বিক সংকটকে দায়ী করা যায় না।’
বলা অনাবশ্যক যে, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতারা পড়ছেন বিপাকে। সাধ্যের মধ্যে ভরছে না তাদের বাজারের ব্যাগ। মাছ–মাংস, শাক–সবজিসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া। দারুণ বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। বাধ্য হয়ে পণ্য কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন তারা। আগে থেকে চড়া দামের অনেক পণ্যের দাম নতুন করে আরও বাড়ছে। এসব পণ্যের সহসা দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। তাই অস্বস্তি নিয়ে বাজার থেকে ফিরছেন ক্রেতারা।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তৎপরতা দাবি করছি আমরা। তাদের উদ্যোগে বাজারে সার্বিক তদারকি চলুক। যাতে পণ্যের দাম নিয়ে কেউ অসাধুতা করতে না পারে–সে ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।