অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই যে কেজিতে চিনির দাম বেড়েছে ১৬ টাকা। গত ১১ মে দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে দেশে চিনির দাম কেজিতে ১৬ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে, যদিও বাজারে এখনই এর চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ গত বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের চিনির দাম বাড়ানোর কথা জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাণিজ্য সচিবের কথা অনুযায়ী, বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজির দাম বেড়ে হবে ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজির দাম বেড়ে হবে ১২৫ টাকা। তবে বাজারে এখনই এই দরে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। দুদিন আগেও ঢাকার কারওয়ান বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছিল কেজি ১৪০ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি পাওয়াই যাচ্ছিল না। সর্বশেষ গত এপ্রিলে চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৪ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১০৯ টাকা করার ঘোষণা এসেছিল। শুরুতে সে অনুযায়ী বিক্রি হলেও তারপর চিনির দাম বাড়তে বাড়তে এখন ১৪০ টাকায় উঠেছে।
চিনির দাম এভাবে বাড়ানোকে কেউ সুদৃষ্টিতে দেখছে না। সবার কাছে সেটা অবিশ্বাস্য ঘটনা। গ্রাহকদের অভিযোগ, গত কয়েকমাস ধরে অস্থির চিনির বাজার। দেখাই মেলে না চিনির। কোনো দোকানেই মিলেছে না প্যাকেট কিংবা খোলা চিনি। অভিযোগ উঠেছে, দরদাম ঠিক হলেই কেবল চিনি বের করছেন বিক্রেতারা। চিনি যেন হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। সরজমিনে বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোনো দোকানেই ‘নেই’ প্যাকেট কিংবা খোলা চিনি। তবে বাজারে ঠিকই বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা বুঝে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। ক্রেতাদের অভিযোগ, চিনি লুকিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। কেবল দরদাম ঠিক হলেই বের করছেন। আর বিক্রেতাদের দাবি, মিলার পর্যায় থেকে চিনি না পাওয়ায় ও দাম বেশি থাকায় দোকানে চিনি তুলছেন না তারা।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সরকার–নির্ধারিত দামে বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি বাজারে চিনির কৃত্রিম সংকটও তৈরি হয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদেরও অভিযোগ– কোম্পানি, ডিলার কেউই চিনি দিচ্ছে না। এ ছাড়া বেশি দামের লোভে চিনির প্যাকেট খুলে বিক্রির অভিযোগ তো রয়েছেই। প্যাকেটের গায়ে দাম লেখা থাকে, তাই প্যাকেট ছিঁড়ে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে খোলা হিসেবে। এই যে দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, এর কারণ কী মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা? ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। তারা এও বলছেন, বাজারে চিনির সরবরাহ সংকটও রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়ছে।
এদিকে, চিনির নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দামে বিক্রি হলেই আগামী সপ্তাহ থেকে সরকার অ্যাকশনে যাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘অনেক হিসাব–নিকাশ করে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। বৈশ্বিক বাজার বিবেচনায় নিয়ে আমরা তো একটি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছি। তবে সমস্যা হচ্ছে, আমরা খুব বেশি চাপ দিলে বাজার থকে পণ্য সরে যায়। তখন একটা উভয় সংকটের মধ্যে পড়ে যাই।’ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। গত ১৫–২০ দিনে বৈশ্বিক বাজারে চিনির দাম টনপ্রতি ৪৫–৫০ ডলার করে বেড়ে গেছে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘আমাদের ৯৯ শতাংশ চিনি আমদানি করতে হয়। এসব কারণে বিদেশের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেশি। বৈশ্বিক দাম বাড়লে আমাদের ওপর প্রভাব পড়বেই। আবার কিছু অসৎ ব্যবসায়ী সুবিধাও নেয়। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা চিনির একটি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। এরপর বাজারে অতিরিক্ত দামে পণ্যটি বিক্রি হলে আগামী সপ্তাহ থেকেই অ্যাকশনে যাব।’
চিনির দাম ঠিক করে দেওয়া হলেও বাজারে তার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখি। দু’দিন হলো দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যদি সেভাবে বিক্রি না হয় তবে আমাদের ভোক্তা অধিকার তো আছেই।’
আসলে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে তৎপর হতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। কেউ যেন কোনোভাবেই বাজারব্যবস্থাকে জিম্মি করে সুবিধা আদায় করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে।