হালদার রেণু অপ্রতুলতায় মৎস্য চাষিরা চড়া দামে রেণু কিনতে হচ্ছে। গত রোববার থেকে সদ্য উৎপাদিত রেণু বিক্রি শুরু হয়েছে। হ্যাচারি থেকে প্রতি কেজি রেণু বিক্রি হয়েছে এক লাখ ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দরে। অথচ গত বছর সদ্য উৎপাদিত পোনা বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায়। স্থানীয় জনসাধারণ জানিয়েছে পর্যাপ্ত রেণু উৎপাদন করতে না পারায় চড়া দামেও মিলছে না রেণু। বিভিন্ন জেলা থেকে রেণু সংগ্রহের জন্য আসা মৎস্যজীবীরা ফেরত যাচ্ছে। এরই মধ্যে স্থানীয় একটি অসৎ চক্র কূপে অথবা পুকুরে ভেজাল রেণু রেখে হালদা রেণু বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টায় আছে বলে জানা গেছে।
নদীর পাড়ের মানুষ বলেছেন, এবার মৎস্যজীবীরা কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে না পারায় রেণু সংকট রয়েছে। এছাড়া যারা অল্প-স্বল্প ডিম পেয়েছিল তাদের অনেকেরই ডিম নষ্ট হয়ে গেছে নদীর লোনা পানির কারণে। সৌভাগ্যমান যারা তারা সংগৃহীত ডিম থেকে রেণু রূপান্তর করে প্রায় চার গুণ দামে পোনা বিক্রি করছে। তাদের অনেকের রেণু ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। জানা যায়, সদ্য উৎপাদিত রেণু সংখ্যা হিসাবে ধরা হলে কেজিতে আনুমানিক দুই লাখ রেণু পাওয়া যায়।
হালদার মৎস্য পোণা উৎপাদনকারীরা বলেছেন রাউজান-হাটহাজারীর মৎস্য বিভাগের চারটি হ্যাচারির মধ্যে তিনটিতে ডিম ফুটিয়ে ভাল সফলতা পাওয়া গেছে। হাটহাজারীর শাহমাদারীর হ্যাচারি যারা ডিম নিয়েছে তাদের কপাল পুড়েছে। এলাকার মৎস্যজীবীদের অভিযোগ হালদার জন্য মৎস্য বিভাগ কতই অমনোযোগি তা শাহমাদারী হ্যাচারি দেখলে বুঝা যায়। কর্তৃপক্ষ এই হ্যাচারির জন্য ডিম উঠানোর পানি ব্যবহার করতে একটি গভীর নলকূপও করে রাখেন নি।
সর্বশেষ মিঠা পানির উৎস্য না পেয়ে হালদার লোনা পানি ব্যবহার করতে গিয়ে মৎস্যজীবীদের ডিম নষ্ট করতে হয়েছে। এছাড়া মৎস্যজীবীদের মধ্যে যারা মাটির কুয়ায় ডিম ফুটানোর চেষ্টা করেছিল তারাও লোনা পানির কারণে একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, রবিবার থেকে পূর্ণমাত্রায় রেণু বিক্রি শুরু করার মাঝে নদী পাড়ের একটি প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে হালদার রেণু নামে বাইর থেকে নিয়ে আসা পোনা বিক্রিতে। এসব প্রতারক এই লক্ষ্য নিয়ে অল্প সংখ্যক হালদার রেণু পুকুরে সংরক্ষণ করে একই সাথে পুকুরে ছাড়ার পরিকল্পনা নিচ্ছে বাইরের রেণু। প্রতারক চক্রটি মিশ্রিত পোণা পুকুর থেকে উঠিয়ে পরবর্তী সময় হালদার পোনা বলে চালিয়ে দিতে পারে।
হালদা বিশেষজ্ঞ চবি অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া জানিয়েছেন, এবার বৈরি আবহাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত ডিম পাওয়া যায়নি। তাছাড়া যেটুকু ডিম সংগ্রহ হয়েছে তার মধ্যে একটি অংশ লোনা পানির কারণে নষ্ট হয়েছে। জানা যায়, মৎস্য বিভাগের চারটি হ্যাচারি ছাড়াও পিকেএসএফ পরিচালিত আইডিএফ-এর একটি হ্যাচারি রাউজানের বিনাজুরিতে রয়েছে। এটিতে এবার ডিম ফুটানো হয়েছে। এছাড়া নদীর দুপাড়ে ডিম ফুটানোর জন্য ১৭৬টি মাটির কূয়া করা হয়েছিল।