ভূমি সংকটে অনিশ্চিত মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প

বান্দরবান প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ জুলাই, ২০২২ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে ভূমি সংকটে জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছা না থাকায় মসজিদের জন্য জমি নির্ধারণের কাজটি থমকে গেছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। তবে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা মসজিদ কমপ্লেক্সের জন্য জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক অনিহাই গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। হলুদিয়া ন্যাচারাল পার্কের মালিক অধ্যাপক মো. ওসমান গনি বলেন, সূয়ালকের হলুদিয়ায় প্রধান সড়কের পাশ্ববর্তী এলাকায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা আমি দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছিল। কিন্তু জায়গা সংকটে জেলা মডেল মসজিদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হওয়াটা দুঃখজনক।
ভূমি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাছির বলেন, সূয়ালকের রেইছা লম্বা রাস্তায় আমাদের রেকর্ডদীয় জমি রয়েছে। পাশ্ববর্তী সরকারি খাস জমিসহ আমাদের জায়গায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আমরা মসজিদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল নির্মাণ হবে বলে শোনেছি। মসজিদের জন্য যে কোনো সময় জায়গাটি দিতে রাজি আছি।
ইসলামী ফাউন্ডেশন বান্দরবানের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, জেলা মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৩ শতাংশ জমির প্রয়োজন। কিন্তু বান্দরবান জেলায় জমি নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে সমন্বয় করে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি নির্ধারণের জন্য এডিসিকে সভাপতি করে একটা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়ের পাশ্ববর্তী মেঘলা এলাকায় একটা জমিও পছন্দ করেছে কমিটি। কিন্তু নির্ধারিত হয়নি এখনো।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির সদস্য একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, সমন্বয়হীনতায় জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্পটি এগুচ্ছে না। কয়েকজন জায়গা দিতে চাচ্ছে, কিন্তু সেটি গ্রহণ করা হচ্ছে না। রেইছা লম্বা রাস্তায় একটি জায়গা নির্ধারিত হয়েছিল, কিন্তু রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল করা হবে বলে বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় আরেকটি জায়গা দেখা হয়, কিন্তু সেটি পাহাড় হওয়ায় গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা সম্মত হয়নি। বর্তমানে মেঘলায় পরিষদের একটি জায়গা পছন্দ করেছে কমিটি। কিন্তু সেটি নিশ্চিত করতে জেলা পরিষদে আবেদন করতে হবে। প্রশাসন-জেলা পরিষদ সম্মত হলে সেখানেই জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ হতে পারে। কিন্তু সেটি এখনো নিশ্চিত নয়।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবান প্রধান সড়কের পাশে হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দৃশ্যমান বড় স্থাপনা রয়েছে। আকর্ষণীয় জেলা মডেল মসজিদটিও প্রধান সড়কের কোথাও নির্মাণ হলে সস্প্রীতির বান্দরবান আরও আলোকিত হবে।
এ বিষয়ে বান্দরবানের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কমিটির দায়িত্বশীল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য কোনো জায়গা এখনো নির্ধারণ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে জায়গা দেখা হচ্ছে, কিন্তু পছন্দমত জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
অনেকে জায়গা দিতে চাচ্ছে, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জায়গা দিতে চাইলেই তো হবে না। মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গাটি উপযুক্ত হতে হবে। পাহাড় কাটতে হবে এবং জলাশয় ভরাট করতে হবে, এমন জায়গা দিলেতো হবে না। জমি সমস্যা ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নেই।
প্রশাসন ও ইসলামি ফাউন্ডেশন সূত্রমতে, ইসলামি মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ কাম ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল এটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পষিদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় বালতির পানিতে পড়ে শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধসাংবাদিক সাইফুল্লাহর বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা