ভূমধ্যসাগরে নৌ দুর্ঘটনায় নিহতদের ৮ জনই বাংলাদেশি

| বুধবার , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:০৫ পূর্বাহ্ণ

ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া উপকূলে গত সপ্তাহে নৌ দুর্ঘটনায় নিহত ৯ অভিবাসন প্রত্যাশীর মধ্যে ৮ জনই বাংলাদেশি। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফ্রিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এফ এম জাহিদ উল ইসলাম। তিনি বলেন, সর্বশেষ আপডেট হচ্ছে, ২৭ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে, তার মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। তাকে জার্জিস থেকে তিউনিসিয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজকে ভোর পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, দূতাবাস থেকে যে খবর পেয়েছিতাতে ৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, তার মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশি। খবর বিডিনিউজের।

লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, লিবিয়া উপকূল থেকে ৫২ জনের একদল অভিবাসী সাগরপথে ইউরোপ যাচ্ছিলেন। যাত্রার মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি তিউনিসিয়া উপকূলে তাদের বহনকারী নৌকাটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। নিহত আটজনের মধ্যে পাঁচজনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস। তারা হলেন সজল, মামুন সেখ, নয়ন বিশ্বাস, কাজী সজীব এবং কায়সার খলিফা। অন্য তিনজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। তারা হলেন রিফাত, রাসেল এবং ইমরুল কায়েস আপন।

এদিকে নৌ দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীদের পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সন্তান, স্বামী, বাবা, ভাই হারিয়ে পরিবারগুলো দিশেহারা; তাদের বিলাপে উঠে এসেছে পরিবারকে সচ্ছল করতে নিহতদের বিদেশ যাওয়ার করুণ ও বিষাদ কাহিনি। তারা আর কোনোদিনই ঘরে ফিরবেন না, এই শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ। প্রতিবেশীরাও ধরে রাখতে পারছে না চোখের জল। এই ঘটনায় দালালের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

নিহত কায়সার খলিফার স্ত্রী নাজমা বেগম বলেন, সব কিছু বিক্রি করে এবং সুদে টাকা এনে স্বামীকে বিদেশে পাঠানোর স্বপ্ন দেখেছিলাম। এখন আমার সবই শেষ হয়ে গেল। আমার দুটি মেয়ে নিয়ে কীভাবে বাঁচবো? নিহত মামুন শেখের বড় ভাই সজীব শেখ বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের প্রলোভনে পড়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ধার দেনা করে ভাইকে বিদেশ পাঠায়ছিলাম।

নিহত সজল বৈরাগীর বাবা সুনীল বৈরাগী বলেন, আমি গরিব মানুষ। টাকার লোভে ছেলেকে স্বপ্নের দেশ ইতালি পাঠাতে চেয়েছিলাম। জমিজমা বিক্রি করে দালালের কাছে টাকা দিয়েছি। এখন আমার সবই শেষ হয়ে গেল। এখন ছেলের লাশটা দেখতে চাই। সরকার যেন লাশ আনার ব্যবস্থাটুকু করে। আমাদের লাশ ফিরিয়ে আনার সামর্থ্য আর নেই।

মৃতদেহ কীভাবে দেশে আনা হবে, সে বিষয়ে দূতাবাস কাজ করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জাহিদ বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে মরদেহ আনার ব্যবস্থা করা হবে। উদ্ধার হওয়া ২৭ বাংলাদেশির মধ্যে যিনি মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন, সেই মনতোষ সরকার মাদারীপুরের রাজৈর থানার আমগ্রাম ইউনিয়নের মনোরঞ্জন সরকারের ছেলে বলে দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে
পরবর্তী নিবন্ধমাথা নত না করতে শেখায় একুশ : প্রধানমন্ত্রী