ভূত রাজার ঘুম ভাঙলো সেই মাস খানেক পর। মোচড় দিয়ে উঠলো যেনো পেট। একটু গাই গুঁই করে পাশ ফিরে শুতেই ঘুম, ভেঙে যায় ভূত রাজার। ভারি অস্বস্তিও লাগছে ভূত রাজার। কি সব ব্যাপার বেশ মনে করতে বসে। হাঁ ঠিক ঠিক করতে বসে। এবং এক সময় তা মনে পড়ে যায়। এই তো কদিন আগে শ্মশান ঘাটে খুঁজে পেয়ে মন খানেক হাড় পিত্তি খেয়েছিলো।
খাবে নাও কেন? কদিন জ্বর ব্যাথায় ভোগে হাঁটাচলা দায় হয়ে পড়েছিলো ভূত রাজার। কী যে খিদে লাগছিলো তা বলাার নয়। জ্বলছিলো পেটটা। এাঁ খায় তো সেটা খায়। চোখে মুখে আঁধার হয়ে আসছিলো খিদেও জা্বলায়। কি খাবে না খাবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
জামতলা শ্মশান ঘাটে গিয়ে তো ভূত রাজার চোখ ছানাবড়া। কিছুক্ষণ আগে হালকা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে এদিকে। জন–মনিষ্য নেই শ্মশানে। শুনেছে ভূত রাজা– কদিন আগে বেশ কটি মড়া পুড়িয়েছে তা বেশ হাড়গোর দেখা যাচ্ছে।
ভূত রাজারকে আর পায় কে। অন্ধকার ঘুটঘুটে রাত। এবার খুঁজে ম্যালা হাড়গোড় এনে বিরান পাহাড়ের গুহায় নিজের আবাসে জম্পেস বসে খেতে খেতে সব একাই সাবাড় করলো। তার সৈন্য সামন্ত উজির নাজির কাউকেও দিলো না কারও খোঁজও নিলো না।
এতো খাওয়ার পর ভূত রাজা হাঁসফাঁস করতে করতে অঘোরে ঘুমিয়ে পড়লো। আর সে কি নাক ডাকা তার। আশ পাশের ভূতরা দূরে পালিয়ে বাঁচলো। যদি ভূত রাজার ঘুমের ব্যাঘাত হয় তবে কারো আর রক্ষা নেই। জ্যান্ত চিবিয়ে খাবে। কাউকেও ছাড় দেবে না।
ভূত রাজার মন্ত্রী সান্ত্রীরা পড়লো বিপাকে। কি করবে তারা। দফায় দফায় চুপি চুপি বৈঠক করলো সবাই। ভারী ভাবনায় পড়ে গেলো ভূত রাজ্যেও বাসিন্দর ভূতরা।
ভূত রাজার ঘুম ভাঙে না তো ভাঙে না। দিন যায় সপ্তাহ যায়, মাসও যায়। কেউ কিছু বলতে পারে না। না মন্ত্রী না পেয়াদা। একজন আরেক জনের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
হাতিশালে হাতি ঘুমায়। ঘোড়াশালে ঘোড়া। ভূত রাজ্যে সব দোকানপাটে তালা ঝুলছে। বসছে না সওদাপাতির বাজার। স্কুল কলেজ বন্ধ। গাড়ি ঘোড়াও চলছে না।
সবার মন খারাপ অবস্থা। কি হচ্ছে না হচ্ছে। কি হয় না হয়। ভূত রাজা ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছে। ঘুম ভাঙছে না ভূত রাজার। কি হবে এখন। দেশ কেমন করে চলবে। কে কাকে বুদ্ধি পরামর্শ দেবে।
কেউ চাকরি বাকরিতে যেতে পারছে না। ঘরে খাওয়া নেই দাওয়া নেই উনুন জ্বলছে না। এক মহাসংকটে কারো মুখে কথা নেই বার্ত নেই।
সবার মুখে এক কথা। খবরদার ভূত রাজার ঘুম যেন না ভাঙে। কেই ভূত রাজার ঘুম ভাঙালে তার গর্দান যাবে। রাজ্য থেকে তাকে বের করে দেওয়া হবে। এই ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। পেটের খিদে পেটে রেখে সব্বাই দোর আটকে ঘরে চুপচাপ বসে আছে। সবাই ভাবছে ভূত রাজার কখন ঘুম ভাঙে কখন জেগে উঠে ভূত রাজার।
তবেই না রাজ্য আবার সচল হবে। চারিদিকে হৈ চৈ আমোদ আহ্লাদ হবে। সবাই ভূত রাজার নামে ধন্য ধন্য করবে।
তা এখন কি হলো। ভূত রাজার ঘুম ভাঙছেইনা। কি হবে এখন। এখন কি করে দেশ চলবে। কে কিসের সিন্ধান্ত দেবে। ভূত রাজা নেই তো। রাজ্যে তা বদলে কে কথা বলবে। কে কাকে বোঝাবো।
মন্ত্রী তেড়ে ফুঁড়ে আসলো। না যাক কাজ কর্ম, অফিস আদালত,না হোক স্কুল কলেজ, থানা পুলিশ, বাজার সওদা, ভালো মন্দ রান্না বান্না আমি কোন কিছু নিয়ে কথা বলতে পারবো না। ভূত রাজার ঘুম ভেঙে এত কিছু আমার বলা বা করার ব্যাপারে জানলে আমার উপর নির্ঘাত বিপদ আসবে। আমার পরিবারকে দীপান্তরে পাঠাবে। ভাবছো কি আমার পরিবারের কি অবস্থা হবে। আমার পায়ের তলায় কি মাটি থাকবে। আমি বংশসুদ্ধ নির্বংশ হয়ে যাবো।
তারচেয়ে বাপু এই ভালো। ঘুমুক রাজ মহাশয় ঘুমাক। পেট পুরে ঘুমাক। চোখ ভরে ঘুমুক। কোন অসুবিধা নেই। দেশ যে ভাবে চলছে চলুক না। কটা দিন এমনি করে কেটে যাক। রাজ মহাশয়ের ঘুম ভাঙলে আমি যার যা বলার আছে তা রাজ মহাশয়ের দরবারে তুলে ধরবো।
মহামন্ত্রীর এই কথা শুনে সবাই ভাবলো মন্ত্রীতো ভুল করেনি। ভূত রাজার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে গিয়ে আবার কোন বিপদে পড়া। আর যা হোক মহামন্ত্রীর মতো শুলে চড়া তো যাবে না। গর্দানও যাবে না।
রাজ্যেও ভূতরা সবাই মহামন্ত্রীর কথা এক বাক্যে মেনে নিয়ে সায় দেয়। সবার এক কথা। রাজ্যে থাকতে হলে ভূত রাজার কোন বিপত্তি করা যাবে না। যদি রাজ্য হতে বের করে মনুষ্য রাজ্যে ফেলে দিয়ে আসে ভূত সেনার। তাহলে মনুষ্যরা বেশ বসিয়ে বসিয়ে পুড়িয়ে মারবে। বাঁচার আর জো থাকবে না।
তাই ভূত রাজ্যে রাজার শাস্তির ভয়ে সবাই মুখে কুলুপ এঁটে ঝিম মেরে বসে থাকলো। চুলোয় উঠলো দোর দুয়ার খোলা, বাজার সওদা সারা,অফিস আদালতে হাজির দেওয়া, কিংবা রাসাতায় ঘোরা ফেরা করা। সব্বাই ভূত রাজার ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় চুপচাপ বসে থাকলো।
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসলো। ভূত রাজার ঘুম ভাঙার খবরে রাজ্যে মহা হৈ চৈ শুরু হলো। ভূতরা মুখে নানা রঙ মেখে চিত্র–বিচিত্র সাজ পোশাক পরে রাস্তায় নেমে এলো। সব্বার সে কি উল্লাস।
রাজবাড়ির গেটে এবার ভূত রাজা এসে দাঁড়াল ভূতদের সামনে। ভূতরা সব্বাই হাততালি দিয়ে রাজাকে অভিনন্দন জানালো। ভূত রাজা ভূত প্রজাদের বললো তার শ্মশানঘাটে খুব বেশি হাড়গোর খাওয়া ভূত রাজ্যে তার জন্য সবার বিপত্তির কথা দুঃখ প্রকাশ করলো। প্রজাদের কাছে এবং এ ও বললো আগামীতে আর এমনটি হবেনা। শ্মশানঘাটের হারগোড় আর এত বেশি খাবো না। বেশি মাত্রায় ঘুমিয়ে পড়ার মত ব্যাপার স্যাপার আর হবে না জানালো ভূত রাজা।
ভূতরা ভূত রাজার কথা শুনলো। তারা ভারী স্বস্তিবোধ করলো। যাক বাবা বাঁচা গেলো। ঘরে বাইরের ঝুট ঝামেলা হতে তাহলে আজ থেকে বেঁচে গেলো তারা। সারা ভূত রাজ্যে আনন্দের সুবাতাস বইতে শুরু করলো। আর এদিকে ভূত রাজা নিজের ভুল খামখেয়ালীর জন্য সেই শ্মশানের কথা মন থেকে মুছেই দিলো। আর লজ্জায় সাত দিন সাত রাত কাউকে মুখই দেখালো না।