ভুয়া ব্যক্তিকে বন্ধকদাতা সাজিয়ে জাল দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি এনজিওর প্রধান নির্বাহী এবং দুজন ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। তারা হলেন এনজিও নওজোয়ানের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ ইমাম হোসেন চৌধুরী, ডাচ–বাংলা ব্যাংক মুরাদপুর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক কে এম এজাজ ও সাবেক ঋণ কর্মকর্তা কৌশিক রায় চৌধুরী। গতকাল রোববার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম–১ এ মামলাটি দায়ের করেন একই কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হামেদ রেজা। মামলার এজাহারে বলা হয়, নওজোয়ান এনজিওর প্রধান নির্বাহী ইমাম হোসেন চৌধুরী ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কৃষি ও সোলার খাতে ৫ কোটি টাকা ঋণের জন্য ডাচ–বাংলা ব্যাংক নগরীর মুরাদপুর শাখায় একটি আবেদন করেন। এতে ঋণের অন্যতম সহ–জামানত হিসেবে নগরীর বাকলিয়ার ৩০ শতক জমি বন্ধক রাখার কথা বলা হয়। বলা হয়, উক্ত জমি নওজোয়ানের সদস্য ফরিদুল হাসানের। আবেদনটির প্রেক্ষিতে ৩১ মার্চ ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর হয় এবং কথিত ফরিদুল হাসান ও ডাচ–বাংলা ব্যাংক মুরাদপুর শাখার মধ্যে ৭ এপ্রিল বন্ধকি দলিল এবং একই তারিখে অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তার দলিল সম্পাদিত হয়।
এজাহারে বলা হয়, প্রকৃত পক্ষে উক্ত বন্ধকি দলিল ও অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তার দলিল ভুয়া দলিল। জালিয়াতির মাধ্যমে এসব সৃজন করা হয়েছে। আরো বলা হয়, বন্ধকি জমির প্রকৃত মালিক ফরিদুল হাসানের ছদ্মবেশে ভুয়া ফরিদুল হাসানকে দিয়ে এসব দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। অনুসন্ধানের সময় প্রকৃত জমির মালিক ফরিদুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করে দুদক। বাঁশখালীর রায়ছাটা এলাকার এই বাসিন্দা জমি বন্ধক দেওয়া সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে যাকে বন্ধকদাতা সাজানো হয়েছে তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এজাহারে আরো বলা হয়, ভুয়া ফরিদুলকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেন নওজোয়ানের প্রধান নির্বাহী ইমাম হোসেন। দলিল মোসাবিদা করার সময় এবং হলফনামা সম্পাদনের সময়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন। ভুয়া ফরিদুলকে উপস্থাপন করে যাবতীয় দলিল সম্পাদন করা এবং নওজোয়ানের অনুকূলে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে এনজিওটির প্রধান নির্বাহী ইমাম হোসেনের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। তর্কিত জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রকৃত মালিক সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, তথ্যের সত্যতা যাচাই, প্রকৃত মালিকের সাথে আলোচনাসহ প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎ করে শনাক্ত করা দায়িত্ব হলেও ব্যাংক কর্মকর্তা কে এম এজাজ তা করেননি। প্রকৃত মালিকের সাথে তার সাক্ষাতের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঋণ কর্মকর্তা হিসেবে কৌশিক রায় চৌধরীও শাখা ম্যানেজারের অথরাইজেশন ব্যতিরেকে বন্ধকি জমির প্রকৃত মালিককে অধিকতর যাচাই/শনাক্তকরণে তৎপর ছিলেন না। বন্ধকদাতা ভুয়া ফরিদুল সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত না হয়ে কেবল শাখা ম্যানেজারের অথরাইজেশনের উপর নির্ভর করে শনাক্তকারী হিসেবে যাবতীয় রেকর্ডপত্রে স্বাক্ষর করে তিনিও অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে বলা হয়।












