ভুলে যখন দারুণ সব আবিষ্কার

দাঊদ আরমান | বুধবার , ৩১ জুলাই, ২০২৪ at ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

ভুল কোনো কাজ করলে আমাদের সবসময় খারাপ লাগে। হয় কোনো মারাত্মক ক্ষতি হয় বা সময়ের বড় অপচয় হয়ে যায়। ভুলটা বোঝার পর আমাদের মনের মাঝে কাজ করে বিশাল আফসোস কিন্তু কিছু ভুল আমাদের জীবনকে বদলেও দিতে পারে। মাঝে মাঝে আমাদের জন্য আশীর্বাদও হয়ে আসে কিছু ভুল। ইতিহাসে কিছু দুর্দান্ত আবিষ্কার হয়েছিল দুর্ঘটনাক্রমে। তাহলে জানা যাক ভুলের ফলে আবিষ্কারের এমন কিছু কাহিনী।

. পপসিকল:

১৯০৫ সালের এক ঠাণ্ডা শীতের দিন। ১১ বছর বয়সী ফ্র্যাঙ্ক এপারসন সোডার গুঁড়ো এবং পানির একটি মিশ্রণ রাতের বেলা ঘরের বাইরে রেখেছিলেন। মিশ্রণটিতে তিনি একটি কাঠি ডুবিয়ে রেখেছিলেন। সকাল নাগাদ মিশ্রণটি জমে গিয়ে তৈরি হয়েছিল পপসিকলের! ফ্র্যাঙ্ক এপারসন ভাবতেও পারেননি তাঁর এই ভুল পরবর্তীতে পৃথিবীতে কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। ভুলে তৈরি হওয়া এই জিনিসটা নিজে চেখে দেখে অবাক হয়ে যান তিনি। পরবর্তীতে আশেপাশের এলাকায় বিক্রির মাধ্যমে বুঝতে পারেন কি জনপ্রিয় একটা আবিষ্কার তিনি করে ফেলেছেন। পরবর্তীতে আইসক্রিমের ধারণা জন্মে এই পপসিকল থেকেই।

. আলুর চিপস:

১৮৫৩ সালের কথা। জর্জ ক্রাম নামে একজন শেফ আলু দিয়ে বিভিন্ন খাবার বানাতেন। একদিন আলু দিয়ে একটা খাবার বানাতে গিয়ে তিনি সেটা বেশি মাত্রায় পুড়িয়ে ফেলেন। পোড়া সেই খাবারটা খেয়ে এক গ্রাহক রেগে যান জর্জের ওপর। মন খারাপ করে জর্জ সিদ্ধান্ত নেন সেই গ্রাহককে যেকোনোভাবে পোড়া আলুটাই খাওয়াবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। জর্জ আলুগুলিকে খুব পাতলা করে কেটে প্রচুর পরিমাণে লবণ দিয়ে মেখে আবার ভাজলেন। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো রেগে যাওয়া সেই গ্রাহকটি এই আলুগুলোই পছন্দ করলেন। জর্জ ক্রামের সেই বিখ্যাত ভুল থেকে তৈরি হয়েছিলো আজকের চিপসের ধারণা।

. মাইক্রোওয়েভ ওভেন:

১৯৪৫ সালে পার্সি স্পেন্সার নামে এক প্রকৌশলী রাডার প্রযুক্তির সাহায্যে কাজ করছিলেন। কর্মস্থলে তিনি একদিন ম্যাগনেট্রন (একটি ডিভাইস যা মাইক্রোওয়েভ নির্গত করে) মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক করা একটা বিষয় লক্ষ্য করেন। ম্যাগনেট্রন চালানোর সময় তাঁর পকেটে থাকা একটা চকলেট বার গলে যায়। পার্সি তখন খুব কৌতুহলী হয়ে ওঠেন এবং একই ম্যাগনেট্রন দিয়ে আরো কয়েকটা খাবার তিনি গরম করেন এবং দেখেন যে খাবারগুলো খুব অল্প সময়ে গরম হয়ে উঠে স্বাদেও কোনোরকম পরিবর্তন ছাড়াই। তাঁর এই ধারণা থেকেই আবিষ্কৃত হয় আজকের মাইক্রোওয়েভ ওভেন।

. সিলি পুটি:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বিজ্ঞানীরা সিন্থেটিক রাবার তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। জেমস রাইট নামের একজন গবেষক সিলিকন তেলের সাথে বোরিক অ্যাসিড মিশিয়ে রাবার তৈরির চেষ্টা করেও প্রত্যাশিত ফল পাননি। কিন্তু জেমস রাইট লক্ষ্য করেন যে একটি বাউন্সি ও প্রসারিত পদার্থ তৈরি হয়েছে যা সংবাদপত্র এবং কমিকস থেকে মুদ্রণ কপি করছে। পরবর্তীতে সিলি পুটি নামে বাচ্চাদের মাঝে জনপ্রিয় হওয়া খেলনার আবিষ্কারের মূলে ছিলো এই ভুলটি।

এভাবেই ঐতিহাসিক কিছু ভুল থেকে জন্ম নেয় অবিশ্বাস্য কিছু আবিষ্কারের। আজকের লেখা থেকে তাহলে কী শিক্ষা পেলাম? ভুল করলেই সেটা নিয়ে আফসোস করার কোনো কারণ নেই। কোনো ভুল মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ হয়েও আসতে পারে, কারো নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে যেতে পারে ইতিহাসের পাতায়। তবে তাই বলে ইচ্ছে করে ভুল করলে চলবে না কিন্তু। জেনেশুনে ভুল করা আমাদের জন্য বড় কোনো ক্ষতির কারণও হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৃষ্টি অঝোর বাঁধ মানে না
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টিবুড়ি ও কুটুমপাখি