কন্ট্রোল অফিস এবং স্টেশন মাস্টারের ভুল ক্লিয়ারেন্সে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে দুটি ট্রেন একই লাইনে চলে এসেছিল। ট্রেন দুটি হলো কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস। দুই ট্রেনের চালকের পারস্পরিক যোগাযোগের কারণে ট্রেন দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। রক্ষা পেয়েছে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ এবং যাত্রীদের প্রাণ। এ ঘটনায় চকরিয়া স্টেশন মাস্টার আজিম উদ্দিনকে ক্লোজড করা হয়েছে। গত শুক্রবার বিকাল ৩টায় পাহাড়তলী কন্ট্রোল অফিস এবং চকরিয়া স্টেশন মাস্টার কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনটিকে চকরিয়া থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ক্লিয়ারেন্স দিয়েছিলেন। ওই লাইন দিয়ে ঢাকা থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস কক্সবাজার যাচ্ছিল। একই সময়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেসকে লোহাগাড়া স্টেশন মাস্টার ক্লিয়ারেন্স দেন লোহাগাড়া থেকে হারবাং যাওয়ার জন্য। লোহাগাড়া স্টেশন মাস্টারের ক্লিয়ারেন্স ঠিক ছিল বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তারা। ভুল ক্লিয়ারেন্স দিয়েছেন চকরিয়া স্টেশন মাস্টার।
দুই ট্রেনের চালক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, দুটি ট্রেন একই লাইনে চলছে। এ সময় তারা পাহাড়তলী কন্ট্রোলে যোগাযোগ করলে কক্সবাজার এক্সপ্রেসকে হারবাং স্টেশনে থামিয়ে পর্যটক এক্সপ্রেসকে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়।
দুই ট্রেনের চালক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ না করলে শুক্রবার কক্সবাজার রুটে হারবাং এলাকায় দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হতো জানান রেলওয়ে রানিং স্টাফ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও লোকোমাস্টার মো. মজিবুর রহমান এবং রেলওয়ে রানিং স্টাফ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও লোকোমাস্টার মো. মজিবুর রহমান ভূইয়া। তারা আজাদীকে বলেন, লোকোমাস্টারের কৃতিত্বের জন্য তাদেরকে পুরস্কৃত করা হোক।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, চকরিয়া স্টেশন মাস্টার আজিম উদ্দিনের ভুল ক্লিয়ারন্সের কারণে একই লাইনে দুটি ট্রেন চলে এসেছিল। দুই ট্রেনের চালক নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে বিষয়টি বুঝতে পারায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনায় আমরা চকরিয়ার স্টেশন মাস্টারকে ক্লোজড করে নিয়ে এসেছি। তিনি জানান, প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় কক্সবাজার লাইনে স্থায়ীভাবে লোকবল নিয়োগ দেওয়া যায়নি। বিভিন্ন স্টেশন থেকে লোকজন নিয়ে এই রুটে ট্রেন চালাচ্ছি। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার রেললাইনটি সিঙ্গেল। এখানে প্রতিদিন দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করলেও এখনো গড়ে উঠেনি সিগন্যালিং ব্যবস্থা। নেই কোনো কিলোমিটার পোস্ট। কোনো স্টেশন খোলা, কোনো স্টেশন বন্ধ। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার নতুন এই রেলপথে ১০১টি ছোট–বড় ক্রসিং রয়েছে। ক্রসিংগুলোতে এখনো পর্যাপ্ত ব্যারিয়ার এবং গেইটকিপার নেই। ২২টির মতো ক্রসিংয়ে ব্যারিয়ার এবং গেইটকিপার আছে। এলাকাবাসীর সচেতনতার অভাবে ক্রসিংগুলোতে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। ট্রেন আসার সময়ে রেললাইনের উপর দিয়ে গাড়ি, গরু–ছাগল পারাপার করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। ঘটছে হতাহতের ঘটনাও। একইসাথে পাথর নিক্ষেপও হচ্ছে। এ নিয়ে কক্সবাজার রুটের যাত্রীদের মাঝে আতংক বাড়ছে। বিশেষ করে কালুরঘাটের পর থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘ এই পথ যাত্রীদের কাছে আতংকের হয়ে উঠছে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে চলাচলরত কক্সবাজার এক্সপ্রেস এবং পর্যটন এক্সপ্রেস শত বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতু পার হওয়ার পর গতি বাড়তে থাকে। দোহাজারীর পর নতুন রেলপথে গতি আরো বাড়ানো হয়। প্রায় ৫ বছর ধরে নতুন এই রেলপথের কাজ শেষ হওয়ার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে ৪ মাস আগে। রেলপথের দুই পাশের মানুষের মাঝে এখনো সচেতনতা গড়ে উঠেনি। নতুন উচ্চগতির আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে প্রতিনিয়ত পাথর নিক্ষেপ করছে এলাকার লোকজন। এছাড়া ট্রেন চলাচলের মুহূর্তে রেলপথ দিয়ে ট্রাক, পিকআপ, গাছবোঝাই নসিমন–করিমন পার হওয়া এবং গরু পার করতে গিয়ে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।
রেলের কর্মকর্তারা জানান, যদি কক্সবাজার রুটে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তা ভয়াবহ রূপ নেবে। কারণ, উদ্ধারকারী ট্রেন আসবে লাকসাম থেকে। উদ্ধারকারী ট্রেনটি চলে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার বেগে। কক্সবাজার লাইনে উদ্ধারকারী ট্রেন পৌঁছতে সময় লাগবে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা।