শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবারের (২০২১ সালের) এসএসসি ও সমমানের প্রথম দিনের পরীক্ষা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ভিন্ন আঙ্গিকে এবারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতবছর নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে এ বছর তা হয়নি। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাড়ে ৮ মাস পর এবারের এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাও সবকয়টি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছেনা। গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে এবার। অন্যান্য বিষয়গুলোতে সাবজেক্ট ম্যাপিং ও জেএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। গতকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষা। কোন ধরণের ঝামেলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম দিনের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দিন পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৩৩৭ জন। এর মাঝে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২৮ হাজার ১৪৩ জন। বাকি ১৯৪ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলেও বহিস্কারের কোন ঘটেনি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, এবারের পরীক্ষায় মানবন্টন, সময় ও শিক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। সবকয়টি বিষয়ের পরিবর্তে মাত্র তিনটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। কমেছে পূর্ণমান। একই সাথে কমানো হয়েছে সময়ও। এবার দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। এছাড়া তত্ত্বীয় ও এমসিকিউ পরীক্ষার মাঝখানে এবার কোন বিরতি রাখা হয়নি।
ভিন্ন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠেয় এ পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসও করা হয়েছে স্বাস্থ্য বিধি মেনে। এক বেঞ্চে একজন পরীক্ষার্থীকে বসিয়ে আগের ও পরের বেঞ্চ খালি রাখা হয়েছে। তবে হলের ভিতরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসলেও কেন্দ্রের বাইরে বরাবরের মতোই জটলা ছিল অভিভাবকদের।
পরীক্ষা শুরুর পর নগরীর জামালখানের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, কলজিয়েট স্কুল, কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজসহ প্রায় সব কেন্দ্রের সামনে অভিভাবকদের ভিড় দেখা দেখা গেছে। এই ভিড়ে হারিয়ে গেছে স্বাস্থ্য বিধি। বরং করোনা সংক্রমণের বড় ধরণের শঙ্কা রয়েছে এই জটলা থেকে। তবে পরীক্ষা শেষ হলে সন্তানকে সাথে করে নিয়ে যাবেন, এজন্যই অপেক্ষায় আছেন বলে জানান অভিভাবকরা।
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন অভিভাবক সানজানা শারমিন। মেয়েকে সাথে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন তিনি। মেয়েকে হলে পাঠিয়ে কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন। জানতে চাইলে এই অভিভাবক বলেন, মেয়েকে নিয়ে এসেছি। পরীক্ষা শেষ হলে সাথে করে নিয়ে যাবো। দেড় ঘণ্টায় পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। তাই এখানে অপেক্ষা করছি। সানজানা শারমিনের মতো আরো কয়েকশ’ অভিভাবক অপেক্ষারত কেন্দ্রের বাইরে। অপেক্ষার এই সময়ে অন্য অভিভাবকদের সাথে খোশ গল্পে মেতে উঠতে দেখা গেছে তাদের।
অন্যদিকে, দেরিতে হলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা। কলজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা শেষে কথা হয় পরীক্ষার্থী অনিমেষ মুগ্ধের সাথে। সে জানায়, ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও অনেক দেরিতে এ পরীক্ষা হচ্ছে। এরপরও পরীক্ষা দিতে পেরে ভালো লাগছে। কারণ, অটো পাশের চেয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করতে পারা ঢের ভালো।
ডা. খাস্তগীর স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বের হচ্ছিল ফাতেমা ইয়াসমিন। এ সময় তাকে কান্না করতে দেখা যায়। জানতে চাইলে ফাতেমা জানায়, প্রথমে এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর ঠিকঠাক দিতে পেরেছি। পরে সিকিউ প্রশ্ন দেয়া হলে কিছুক্ষণ লেখার পরই হঠাৎ মাথা ঘুরে চোখ-মুখে অন্ধকার দেখি। পরীক্ষার হলেই পড়ে যাই। পরে স্যারেরা স্যালাইন করে দেয়। কিন্তু আমি আর ভালো করে পরীক্ষা দিতে পারিনি। এ জন্য ভয় লাগছে।
এদিকে, পরীক্ষার প্রথমদিন নগরীর বেশকয়টি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী, সচিব প্রফেসর আব্দুল আলীম, কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ। পরিদর্শনে পরীক্ষার সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রশাসন ও বোর্ড কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট ১ লাখ ৬১ হাজার ১২২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে এবারের পরীক্ষায়। এর মধ্যে ছাত্রী অংশ নিচ্ছে ৮৫ হাজার ৮৭০ জন। আর ছাত্র পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৫ হাজার ২৫২ জন। ১ হাজার ৭৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০৪টি কেন্দ্রে এবারে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৩ নভেম্বর এসব পরীক্ষা (তত্ত্বীয় অংশ) শেষ হবে।