কথায় বলে, প্রথম প্রেম সহজে ভোলা যায় না। মো. শাহেদও ভুলতে পারেননি। বুকে ব্লেড আর সুচের মাধ্যমে রক্ত ঝরিয়ে লেখা নাম প্রথম প্রেমিকা শারমিনের। কিন্তু প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যান চার বছর আগে। তার বিয়ে হয়ে যায়। এ নিয়ে থানা পুলিশ হয়।
সিনেমার কাহিনীর মতো প্রেমিক শাহেদ প্রকাশ ভিখারি জড়িয়ে পড়েন অপরাধে। গড়ে তুলেন ১৫ জনের গ্যাং। শারমিনের কষ্ট ভুলতে দুটো বিয়ে করেন। দুই স্ত্রীই বর্তমান। কিন্তু শারমিনকে আজও ভালোবাসেন তিনি। শারমিনের কথা মনে এলেই হিংস্র হয়ে উঠেন। তার একটাই কথা, শারমিন তার ভালোমানুষির মূল্য দেয়নি। তাকে বাধ্য করেছে নষ্ট পথে আসতে। জেনেশুনেই তিনি এ পথে এসেছেন।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, শাহেদ এই এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আমি জয়েন করার পর তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। এর আগের মামলাও আছে। ইতোমধ্যে পাঁচবার জেল খেটেছে শাহেদ। সম্প্রতি ডবলমুরিং এলাকায় মাদক বিরোধী কমিটি করে দিয়েছি। সেই কমিটির সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে দুজনকে আহত করেছে শাহেদ ও তার বাহিনী। নিজে থাকে ভিখারির বেশে, খায় পান্তা ভাত। কিন্তু গ্রুপের অন্য সদস্যদের খাওয়ায় মাংস পোলাও। এক অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী এ শাহেদ।
শাহেদ জানান, ভিখারির মতো চলাফেরার কারণে গ্রুপের সদস্যরা তাকে নাম দিয়েছে ভিখারি। তিনি বলেন, ফকির যদি টাইটেল থাকতে পারে, ভিখারিও টাইটেল হওয়া উচিত। ডবলমুরিং থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও কিশোর অপরাধী চক্রের ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত শাহেদ।
পুলিশ জানিয়েছে, শাহেদ বর্তমানে মাদকের কারবারের মধ্য দিয়ে মোটামুটি বিত্তশালী। বিলাসী জীবনযাপন করে। জেসমিন ও জান্নাত নামে তার দুজন স্ত্রী আছে। তারাও জানে প্রথম প্রেমিকা শারমিনকে নিয়ে তার পাগলামির কথা। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে পারে না।
গতকাল রোববার ভোরে নগরীর আগ্রাবাদে পানওয়ালাপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বাসাও ওই এলাকায়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি এলজি, ১ রাউন্ড কার্তুজ ও ৫০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। বছর পাঁচেক ধরে শাহেদ ইয়াবা ব্যবসা করছেন। মূলত কঙবাজার থেকে আসা ইয়াবা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তিনি খুচরা বিক্রেতা ও সেবনকারীদের কাছে সরবরাহ করেন। আগ্রাবাদ পানওয়ালা পাড়া, বেপারিপাড়া তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা। এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি ১৪/১৫ জনের একটি কিশোর গ্রুপ তৈরি করেছেন।
স্থানীয়ভাবে এই গ্রুপের নাম ভিখারি বাহিনী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। কিশোর গ্রুপের সদস্যদের কাজ হচ্ছে শাহেদের ক্রেতাদের কাছে ইয়াবা পৌছে দেওয়া ও ছিনতাই করা। শাহেদের বিরুদ্ধে কেউ এলাকায় দাঁড়াতে চাইলে তাকে শায়েস্তা করা। তার বেতনভুক্ত বেশ কয়েকজন কর্মচারী আছে, যাদের দায়িত্ব পুলিশ এলে তাকে তথ্য দেওয়া। এ কারণেই তাকে ধরতে বেশ বেগ পেতে হয়।