ঊর্মি বড়ুয়া
ফেব্রুয়ারির। এই মাসকে ভাষার মাস বলে থাকি, কেননা, এই মাসেই ভাষা আমাদের একান্ত নিজস্ব বিষয় হয়ে আসে, সে–ই বাহান্ন‘তে। আমরা বাংলাদেশ ও বাঙালিরা বাংলায় কথা বলি। আমার কাছে একটা বিষয় বোধগম্য নয়, শুদ্ধ ভাষা…
শুদ্ধ মানে কী? যেখানে ভেজাল নেই… আচ্ছা, আমার মা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। সেটা শুদ্ধ নয়, সেটা কি ভেজাল? আমার মা সুন্দর করে কথা বলতে জানেন না। তিনি জানেন না মহাপ্রাণ বর্ণ, ঘোষ বর্ণ কী? কীভাবে উচ্চারণ করতে হয়? তাঁর উচ্চারণ আঞ্চলিকতায় পরিপূর্ণ। আমি সেই ভাষা–ই শুনে শিখে বেড়ে উঠেছি। মনের ভাব, চাওয়া, অভিযোগ, ভালো লাগা প্রকাশ করেছি। এখন, আমার সবকিছুই কি অশুদ্ধ? মায়ের কথা কি অশুদ্ধ? মাতৃভাষা – মায়ের ভাষা। ‘মা’ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ, সুন্দর সৃষ্টি। মায়ের কোনও কিছু কেনো অশুদ্ধ হবে? এখানে একটা বিষয় হতে পারে – মান ভাষা, যে ভাষা উচ্চারণ সর্বোপরি পঠন, লিখন, উচ্চারণ, সবকিছুই সারা বাংলা ভাষাভাষীর জন্য এক ও নির্দিষ্ট। তাতে শব্দের কাঠামো, নির্মাণ, উচ্চারণ সবকিছুর ওজন, স্থান সবটুকু সবার জন্য নির্ধারিত ও বোধগম্য হয়। একেক স্থানে আঞ্চলিক ভাষা একেক রকম। আমরা সব জেলার ভাষা, সব এলাকার ভাষা সব বুঝিই না তাতে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এই ভুল বুঝাবুঝি এড়ানো, ভাষার সৌন্দর্যের জন্য প্রমিত ভাষা নামক শব্দটা ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত।
শুদ্ধ ভাষা না। অনেকে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলাকে অসম্মানজনক মনে করে। আমি গর্ববোধ করি। আমার ভাষার জন্য হয়তো বলবেন – আমি শিক্ষিত নই…। বাদ দিই, এসকল অতীত তার্কিক বিষয়।
ভালোবাসি মা, ভালোবাসি ভাষা
ভাষায় মুগ্ধতা ছড়াই, ভাষার সম্মান রক্ষা করি
ভাষার অপচয় না করি, অপপ্রয়োগ না করি
এটুকুই বোধ হয় যথেষ্ট।
প্রতিদিন ভাষার জন্য
ভাষায় নিজেকে আত্মপ্রকাশের জন্য।