আজাদী ডেস্ক
বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হবে কিনা, সে প্রশ্নটি নিয়ে যখন বিতর্ক ওঠে, তখন সতর্ক হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তান অঞ্চলের আপামর জনগণ। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট দেশবিভাগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের যে রূপ দাঁড়িয়েছিল তাতে নতুন রাষ্ট্রে বাঙালি ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। মাতৃভাষা বাংলা বিষয়ক বিতর্ক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর অতিদ্রুত রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক বিতর্কের পথ ধরে বিক্ষোভে পরিণত হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের প্রথম সক্রিয় ভাষা–আন্দোলনের পেছনে সচেতনভাবে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেতনা এবং একটি বিশেষ মানবগোষ্ঠী হিসেবে স্বাতন্ত্র্যবোধ কাজ করছিল।
বাঙালি জাতির প্রকৃত ভিত্তিসূত্র বাংলা ভাষা। ‘অমর একুশ’–এর সূত্র ধরে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি জাতিকে গৌরবান্বিত করার শ্রেষ্ঠ সন্তানের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিকভাবে বাংলা যেমন শোষিত শ্রেণির ভাষা, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনও আজীবন শোষিত শ্রেণির মুক্তির জন্য লড়াই করা। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাসংগ্রাম ও বাংলাদেশের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এমনি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে একটি ভিন্ন অন্যটি কল্পনারও বাইরে।
ভাষা আন্দোলনের পটভূমি বেশ দীর্ঘ। এই আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে কলকাতায় একটি অসামপ্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালের ৬–৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলন আহ্বান করা হয়। ঐ সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করেন সেই দিনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা–সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তান কর্মী সম্মেলন প্রস্তাব করিতেছে যে, বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের লিখার বাহন ও আইন–আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হইবে তৎসম্পর্কে আলাপ–আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হোক এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক’ (‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ গাজীউল হক, ভাষাসংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধু, পৃষ্ঠা–৯)। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে নয়, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন–সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে, দিয়েছেন নেতৃত্ব।