পাশের বাড়ির বৃদ্ধ জ্যাঠামশায়, বার্ধক্যজনিত অন্ধত্বে ভুগছিলেন। পত্রিকার বড় বড় শিরোনামটুকু ঝাপসা দেখতেন বটে, তবে ছোটো হরফে বিস্তারিত কিছুই পড়তে পারতেন না। খুব বিনীতভাবেই বলতেন, বা আবদার করতেন পত্রিকাটুকু সময় পেলে যেনো পড়ে দেই, ঊনার পছন্দমতন শিরোনামগুলো।
বিনয়ের সেই প্রথম পাঠ আমার। কিভাবে নম্র হয়েও কথা বলা যায়, অতি সহজ ও স্বাভাবিক থেকেও কত শ্রদ্ধা মানুষ লাভ করতে পারে তিনি তা দেখিয়েছিলেন আমায়। শিক্ষক ছিলেন তিনি। পত্রিকাটি পছন্দ করতেন খুব।
বাবা প্রতিদিন বাড়িতে পত্রিকা নিতেন। এই একটি পত্রিকা সারাবাড়ির লোক নিয়ে নিয়ে পড়তেন। সকালে হকার এসে দিয়ে যেতেন। জ্যাঠামশায়ের আবদারটুকু পূরণ করতেই অনেকটা সময় আমি পত্রিকা হাতে নিতাম। তখনো প্রাইমারির গণ্ডি পেরোতে পারিনি। ধীরে ধীরে পত্রিকার সাথে বড় ভালেবাসা তৈরি হয়ে গেলো। প্রথম পাতায় ‘দৈনিক আজাদী’ দেখলেই মনটা কেমন কেমন করে উঠতো। সোমবারের প্রতীক্ষায় পুরো সপ্তাহ। আজমিশালীর জন্য প্রতীক্ষা। আজমিশালী ছিলো আজাদীর সোমবারের সাপ্তাহিক আয়োজন। আজমিশালীর নিয়মিত লেখকদের নামগুলো আছে কিনা তা চোখ বুলিয়ে নেয়া, শত ব্যস্ততার ফাঁকে। সবার আগে আজমিশালীকে নিজের দখলে নেবার প্রচেষ্টায় সোমবারের সকাল শুরু হতো। সোমবারের সকাল শুরু হতো হকারের প্রতীক্ষায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পুরোটা পড়ার জন্য বিকেলের কত খেলা বাদ দিয়েছিলাম, সেটা এখন ইতিহাস। কালের বিবর্তনে অনেক পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আজাদীরও পরিবর্তন ঘটে। আজমিশালী হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় বালিকার প্রথম প্রেম! ‘আজমিশালী’ বালিকার প্রথম প্রেমের নাম ছিলো। জীবনের সাথে এতটা জুড়ে গিয়েছিলো, কখনো মন থেকে আর মুছে ফেলা গেলো না। তাই আজও এই এত বছর পরেও বালিকা তার প্রথম প্রেমের কথা ভুলতে পারলো না। স্বাধীন বাংলার প্রথম দৈনিক, যাকে ছাড়া চট্টগ্রামের লোকজন একটি পরিপূর্ণ সকালের কথা ভাবতেই পারে না। চায়ের টেবিলে আজাদী না পেলে তাদের সকাল যেনো শুরুই হতে চায় না। এই হলো আজাদী। যা কিনা চট্টগ্রামের মানুষজনের নিত্যদিনের সুখ দুঃখের সাথীতে পরিণত হয়ে গেছে সেই কবে থেকেই। ‘দৈনিক আজাদী’ এভাবেই পাঠকনন্দিত হয়ে থাকুক আগামী দিনগুলোতেও।আজাদীর সাথে সম্পৃক্ত সেই সব মানুষ, যাঁদের শ্রম ও আন্তরিকতায় আজাদীর এত তুমুল পাঠকপ্রিয়তা, তাঁদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। দৈনিক আজাদী এরকমই পাঠকনন্দিত হয়ে থাকুক সকলের আস্থায়, সকলের ভালোবাসায়। ভালোবাসি প্রিয় দৈনিক।