ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের গর্ব করতে নেই, সময়ের ব্যবধানে একদিন সবচেয়ে কাছের বন্ধুরাও থাকে না! ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের কথা যদি বলি, গরিবের বন্ধুত্ব সলিড। গরিবের ভালোবাসা ও বন্ধুত্বে কোনো স্বার্থ থাকে না।
কিন্তু ধনীদের ভালোবাসা ও বন্ধুত্বে থাকে প্রচুর স্বার্থপরতা। ধনী ব্যক্তিদের বন্ধুর অভাব নেই, কিন্তু সত্যিকারের বন্ধু খুবই কম তাদের। সবাই তো স্বার্থের জন্যই তাদেরকে বন্ধু বানায়। কখনো যদি আপনাদের সেই খারাপ সময় আসে দেখবেন পিছনে তাকিয়ে আপনার কোনো ভালোবাসা ও বন্ধুকে খুঁজে পাবেন না। তিতা হলেও কথাটা সত্য। ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব–সম্পর্ক দুটি যতটা পরষ্পর ঘনিষ্ঠ, ঠিক ততটাই আলাদা। এ ব্যাপারে বোধ হয় সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’–তে তিনি বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা নিয়ে লিখেছেন, ‘বন্ধুত্ব ও ভালোবাসায় অনেক তফাৎ আছে, কিন্তু ঝট্ করিয়া সে তফাৎ ধরা যায় না। বন্ধুত্ব আটপৌরে, ভালোবাসা পোশাকী।’
ঠিক তা–ই। প্রেম বা ভালোবাসা তীব্র আবেগমথিত অনুভূতি। এ অনুভূতির হ্রাস–বৃদ্ধি বা অবলুপ্তি আছে। কিন্তু বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এসব নেহাতই গৌণ বিষয়। সন্দেহ নেই, বন্ধুত্বে ভালোবাসা থাকে। তবে সেই সঙ্গে আরও এমন কিছু থাকে, যা প্রেমে–ভালোবাসায় না–ও থাকতে পারে। বিশ্বাস, ভরসা, শ্রদ্ধা, সততা, সুখ–দুঃখ, হাসি–উল্লাস–এসবের সম্মিলিত নাম বন্ধুত্ব। প্রেমের ক্ষেত্রে এই সবকিছুর উপস্থিতি একসঙ্গে পাওয়া কঠিন। ফলে বন্ধুত্বে ভালোবাসা থাকলেও ভালোবাসায় বন্ধুত্ব না থাকার ঝুঁকি আছে। তবে এত তুলনামূলক আলোচনার মানে কিন্তু এই নয় যে বন্ধুত্বের বিবেচনায় প্রেমকে ছোট করে দেখা হচ্ছে। দুটি সম্পর্ক নিজ নিজ ক্ষেত্রে হয়তো যথার্থ। কিন্তু এই দুটি সম্পর্ককে যদি একই সুতোয় গাঁথা যায়, বাঁধা যায় অভিন্ন অনুভূতিতে, তাহলে কেমন হয়! বন্ধুত্ব ও প্রেমের পুণ্য বাঁধন পরস্পরে মিলে গেলে যাপিত জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গসম। কাউকে সারা জীবন কাছে পেতে চান? তাহলে প্রেম দিয়ে নয়, বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখুন।