ভার্টিক্যাল গার্ডেন নিয়ে র‌্যাংকস এফসি

| শুক্রবার , ৬ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

একটা সময় আজকের এই ব্যস্ত চট্টগ্রাম ছিল প্রকৃতির নিজ হাতে সাজানো এক নগরী। পাহাড়, নদী আর সমুদ্রে ঘেরা এই জনপদ ছিল আরও সবুজ আর জীব-বৈচিত্র্যে ভরপুর। পাখির কূজনে এই নগরীতে সকাল হতো আর সন্ধ্যেবেলায় পশ্চিমাকাশের আবীর ছুঁয়ে যেতো গোটা জনপদকে। সে অনেক আগের কথা। এরপর মানুষ বাড়লো, কমতে লাগলো গাছপালা আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়লো দালানকোঠা। স্রোতস্বীনি কর্ণফুলির দু’পাশের অরণ্য হারিয়ে গেল আর সেখানে জায়গা করে নিল কলকারখানা। আজ ইট-পাথর আর কংক্রিটের রাজ্য হয়ে উঠেছে এই শহর।
সেই ক্রমবর্ধিত শহরের নির্মাণযজ্ঞ এখনও চলছে। ইট-বালু-সুরকির ভার বাড়ছে, আর নির্মাণযজ্ঞ মানেই যান্ত্রিক কোলাহল। খোঁড়াখুঁড়ি আর নির্মাণ যন্ত্রপাতির বিরামহীন আওয়াজ। ইট-বালু-সিমেন্টের সেই রাজ্য তো ধুলোমলিন। এমন ধুলোমলিন নির্মাণাধীন প্রকল্পকে আড়াল করতে আমরা দেয়াল তুলতে দেখি। সে দেয়ালও কখনো ইট-সিমেন্টের কখনো বা ইস্পাতের। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবুজের শান্ত ছোঁয়া রাখতে গ্রিন ফেন্সিং বা সবুজ বেষ্টনীর প্রচলনও রয়েছে। চট্টগ্রামে এই ভার্টিক্যাল গার্ডেন সর্বপ্রথম নিয়ে আসে র‌্যানকনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান র‌্যাংকস এফসি প্রপার্টিজ লিমিটেড। ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম নিরীক্ষামূলক ভার্টিক্যাল ফেন্স তৈরি করে তারা তাদের মেহেদিবাগের হোয়াইট ওক প্রকল্পে। বিভিন্ন উদ্ভিদ দিয়ে এই বেষ্টনী তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহার করে ফার্ন এবং মনস্টিরা।
বর্তমানে নগরীর মেহেদীবাগে তাদের একটি নির্মাণাধীন প্রকল্পের সীমানা দেয়াল দেখলে মনে হয় সবুজের বাগান। শুধু মেহেদীবাগেই নয়, প্রতিষ্ঠানটির পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার জেড কিংসডেল, নাসিরাবাদ প্রপার্টিজের পার্ক ট্যারেসসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য প্রকল্পে ভার্টিক্যাল ফেন্সগুলো তৈরি করা হয়েছে প্রাকৃতিক নানারকম সবুজ দিয়ে।
র‌্যাংকসের প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন স্থপতির সঙ্গেও কথা হয়েছিল এর উপকারিতা নিয়ে। তাদের কাছেই জানা গেল চারটি বিষয়। গ্রিন ফেন্স নির্মাণাধীন প্রকল্পের দূষণ কমায় ও সৌন্দর্যবর্ধন করে। দ্বিতীয়ত, দেয়াল রং করতে হয় না। কারণ, এটি তো গাছের তৈরি। আর রং করার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রং থেকে বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান নিঃসরণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তৃতীয়ত, নির্মাণাধীন প্রকল্পের চেহারাই বদলে যায়। দারুণ নান্দনিক আর রুচিশীল দেখায় প্রকল্পের স্থানটি। চতুর্থত, বায়ুদূষণের এই শহর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে আর অঙিজেন দিয়ে পরিবেশের দূষণ কমায়। অল্পমাত্রায় হলেও কমে শব্দদূষণ। সর্বোপরি, বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা দূর করে মানুষকে মানসিকভাবে প্রশান্তি দেয়। আরও একটি সুবিধা হলো, পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করেই এটি রিসাইকেল করা সম্ভব। অর্থাৎ, নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর এই গ্রিন ফেন্সিং তুলে নিয়ে অন্য কোনো প্রকল্পেও ব্যবহার করা যায়। এই গ্রিন ফেন্সকে আবার বলা হচ্ছে ভার্টিক্যাল গার্ডেন বা উলম্ব বাগান। সহজ ভাষায় গ্রিন ফেন্স হলো সবুজ বেষ্টনী। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে এই সবুজ দেয়াল ব্যাপক জনপ্রিয়। ভবনের নির্মাণকাজ আড়াল করতে ইট-সিমেন্টে বা ইস্পাতের নির্মিত দেয়ালের পরিবর্তে এটি তৈরি হয় গাছ দিয়ে। এই প্রচেষ্টা পরবর্তী সময়ে ল্যান্ডস্কেপিং ও ভবনের বিভিন্ন স্থানে বাগান তৈরির মাধ্যমে ভবন ও আশপাশেও প্রতিফলিত হয়।
চট্টগ্রামে এই গ্রিন ফেন্সকে র‌্যাংকস এফসি’র প্রচলন করার পেছনে র‌্যানকনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইনস্পেসের রয়েছে অনেক ভূমিকা। র‌্যানকনের স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ইনস্পেসের প্রধান স্থপতি ওয়াহিদুর রহমান আদিব বলেন, আমরা জানি ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রাম অনেক বেশি সবুজ। কাজ করার সময় অনিচ্ছাকৃত ভাবে অনেক সময় কিছু গাছ কেটে ফেলতে হয়। তাই আমরা কাজ শুরুর প্রথমদিন থেকেই সীমানা দেয়ালে ভার্টিক্যাল গ্রিনের ব্যবহার করি। যার ফলে অনিচ্ছাকৃত ক্ষতি অনেকাংশেই পুষিয়ে আনা যায়। তিনি বলেন, সমাজ ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা আমাদের ভবনের দেয়ালে এবং ছাদের ডিজাইনে সবসময়ই ভার্টিক্যাল গ্রিনকে প্রাধান্য দেই। যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি মানুষের মনে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা ও সৃষ্টি করে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বলেন, ইট সুরকীর শহরে একটুখানি প্রকৃতির ছোঁয়ার জন্য আমাদের সবসময় চেষ্টা থাকে। এর মধ্যে র‌্যাংকস এফসি প্রপার্টিজ লিমিটেডের ভবন ডিজাইনের সাথে সবুজের মিশেল ঘটানোর প্রচেষ্টা সবসময় চোখে পড়ে। ভবনের দেয়ালে এবং নির্মাণাধীন প্রকল্পের বেষ্টনীতে ভার্টিকাল গার্ডেন এর যে কনসেপ্ট তারা নিয়ে এসেছে সেটার আমি প্রশংসা করি। সম্প্রতি র‌্যাংকস এফসি’র এম এম আলি রোডের প্রকল্প মেমোরি ৭১ এর শেষ মুহূর্তের নির্মাণ কাজ চলছে। এ বছরের শেষেই প্রকল্পটি গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এই প্রকল্পটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে প্রকল্পের নিচতলা থেকে নবম তলার পূর্বমুখী একটি দেয়ালে শোভা পাচ্ছে ভার্টিক্যাল গার্ডেন।
প্রতিষ্ঠানের সিইও তানভির শাহরিয়ার রিমন বলেন, দেশের কোন আবাসিক ভবনের নিচ তলা থেকে টপ ফ্লোর পর্যন্ত এঙটেরিয়র ওয়ালে ভার্টিক্যাল গার্ডেনের উদ্ভাবনী ব্যবহার এই প্রথম। এটার নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমাদের টেকনিক্যাল টিমের ডিটেইল সল্যুশন কাজটিকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তিনি বলেন, এখানে গাছে পানি দেয়া থেকে শুরু করে, প্রত্যেকটি ভার্টিক্যাল গার্ডেনে আলো ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে অটোমেশনের মাধ্যমে এবং র‌্যাংকস এফসি প্রপার্টিজ হস্তান্তর পরবর্তি সময়েও এই ভার্টিক্যাল গার্ডেনগুলো নিজেরাই পেশাদারদের দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুয়েট শিক্ষক সমিতির সংবর্ধনা ও মতবিনিময়
পরবর্তী নিবন্ধশুটিংয়ে আহত পরীমনি