নগরীতে গতকাল সকাল থেকে টানা ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় বেশ কিছু এলাকায় পানি উঠার পাশাপাশি বিদ্যুতের আসা–যাওয়ার ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলে নগরীর একাধিক এলাকায় বিদ্যুতের আসা–যাওয়া শুরু হয়। মুরাদপুরসহ নগরীর অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে বাতাসের কারণে সকালে খুলশী থানাধীন ইউএসটিসির বাউন্ডারি ওয়ালের পাশে একটি বিদ্যুতের খুঁটির ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়ে। গাছ কেটে সরানোর সময় বিদ্যুতের খুঁটিও পড়ে যায়। ভারী বৃষ্টির মধ্যে গাছ কেটে বিদ্যুতের খুঁটি পুনরায় স্থাপন করতে গিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের অনেক সময় লেগে যায়। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল বলে জানা গেছে। রাত ৮টার পরে বিদ্যুতের খুঁটি পুনরায় বসানোর পর ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়।
সকাল থেকে পিডিবির স্টেডিয়াম, বাকলিয়া, পাথরঘাটা, খুলশী, বিবিরহাট, কালুরঘাট, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, অঙিজেন, কর্নেলহাটসহ বিভিন্ন সাব স্টেশনের গ্রাহকদের বিদ্যুতের আসা–যাওয়ার ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
চট্টগ্রামের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে খবর নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৪৮ দশমিক শূন্য ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারী বৃষ্টির সাথে ঝড়ো বাতাস থাকায় বিদ্যুতের গ্রাহকদের ভোগান্তি বেড়েছে বলে জানা গেছে।
পিডিবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানা গেছে, গতকাল চট্টগ্রামে লোডশেডিং ছিল না। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।
এই ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সকালে প্রথমে ইউএসটিসির পাশে বিদ্যুতের খুঁটির ওপর একটি গাছ ভেঙে পড়ে। গাছ কেটে সরানোর সময় খুঁটিও পড়ে যায়। ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার মধ্যেও আমাদের বিদ্যুতের কর্মীরা কাজ করেছেন সারাদিন। গতকাল রাত ৮টায় যখন কথা হয় তখনও খুঁটি বাসানোর কাজ চলছে বলে জানান প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী।
এদিকে মুরাদপুরে পানি ওঠার কারণে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার (গতকাল) ১৯৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে জানিয়ে প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে সারাদিন চাহিদা ছিল সাড়ে ৮শ’ মেগাওয়াট। সন্ধ্যায় চাহিদা একটু বেড়ে ১১শ’ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।
পিডিবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানা গেছে, পিডিবির রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। শিকলবাহা ৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মাত্র ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট চালু রয়েছে। গতকাল এই ৫টি ইউনিট থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। বাঁশখালী এসএস পাওয়ার থেকে ৫৬৮ মেগাওয়াট এবং মাতারবাড়ি ৬০০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র থেকে ৮৮১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। পিডিবির দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ১৭ মেগাওয়াট এবং হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন হয়েছে ৮০ মেগাওয়াট। তবে গ্যাস ও তেল ভিত্তিক অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। অনেকগুলোর উৎপাদন একেবারেই কমে এসেছে।