নিজেদের বাজার সামাল দিতে আগামী অক্টোবর চিনি রপ্তানি বন্ধ করছে ভারত। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগেই চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে চিনির দাম বাড়তে শুরু করেছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম কমার কারণে কেজিতে ৫ টাকা কমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই নির্দেশনা কার্যকরের পর পর এখন পাইকারিতে দাম বাড়ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের দেশে গুটি কয়েক শিল্পগ্রুপের হাতে রয়েছে চিনির বাজার। মাঝে মাঝে তারা ইচ্ছে করে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বাজারে কৃত্রিম সংকট করেন। এমনিতে বাজার বাড়তি, এরমধ্যে ভারত রপ্তানি বন্ধ করবে এই ইস্যুতে চিনির মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভোক্তারা বলছেন, চিনির বাজারে মনে হচ্ছে সরকারেরও নিয়ন্ত্রণ নেই। কিছুদিন দিন পর পর বিভিন্ন ইস্যুতে দাম বাড়ানো হচ্ছে। চিনির বাড়তি দাম গুণতে গুণতে ভোক্তারা এক প্রকার তিতা হয়ে গেছে।
গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬৫০ টাকা। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০ টাকায়। নগরীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্য ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়।
খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিনির বাজার এখন কিছুটা বেড়েছে। মূলত ভারত রপ্তানি বন্ধ করার সিদ্ধান্তের কারণে চিনির দাম বাড়তি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, চিনির বাজার নিয়ে আসলে নতুন করে কিছু বলার নেই। আমাদের দেশে হাতেগোনা কয়েকটি গ্রুপ চিনির পরিশোধন ও বিপণনের সাথে জড়িত। সরকার চাইলে এসব কোম্পানিকে নজররদারির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সেসবের কিছুই হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন।