এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ আহমেদাবাদের সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইক যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। খবর বাংলানিউজের।
বোয়িং ৭৮৭–৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী ছিলেন। ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পাইলট মে– ডে সংকেত দেন, তারপর উড়োজাহাজটি একটি আবাসিক এলাকায় পড়ে বিস্ফোরিত হয় এবং এতে আগুন ধরে যায়। উড়োজাহাজটি মাত্র ৮৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে আরোহীদের সবাই প্রাণ হারান। ভারত বেশ কয়েকটি ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু তথ্য দেওয়া হলো।
১. কোজিকোড় দুর্ঘটনা ৭ আগস্ট ২০২০ : এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি উড়োজাহাজ কোভিড–১৯ মহামারির সময় বন্দে ভারত মিশনের অংশ হিসেবে দুবাই থেকে যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে আনছিল। কালিকট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারী বৃষ্টির মধ্যে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে পিছলে পড়ে প্রায় ৩৫ ফুট গভীর একটি খাদে। এতে ওই উড়োজাহাজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে দুইজন পাইলটও আছেন। শতাধিক যাত্রী আহত হন। ওই বিমানবন্দরে টেবিলটপ ধরনের রানওয়ে ছিল, যা খারাপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই দুর্ঘটনার পর ভারতের অন্যান্য এমন ধরনের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুনরায় পর্যালোচনা করা হয়।
২. ম্যাঙ্গালুরু দুর্ঘটনা ২২ মে, ২০১০ : এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি উড়োজাহাজ দুবাই থেকে ম্যাঙ্গালুরু যাচ্ছিল। অবতরণের সময় সেটি রানওয়ে পার হয়ে গিয়ে একটি গভীর খাদে পড়ে যায়। পড়েই বিমানটি ভেঙে যায় এবং আগুন ধরে যায়। বিমানে মোট ১৬৬ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৫৮ জন মারা যান, বেঁচে যান মাত্র ৮ জন। তদন্তকারীরা জানান, অবতরণের জন্য উড়োজাহাজের অবস্থান ঠিকঠাক না থাকলেও পাইলট চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত পাইলটকে আবার উড়ে গিয়ে দ্বিতীয়বার অবতরণের চেষ্টা করতে হয় কিন্তু তা না করায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৩. পাটনা দুর্ঘটনা ১৭ জুলাই, ২০০০ : অ্যালায়েন্স এয়ারের একটি উড়োজাহাজ কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিল, পথে একটি যাত্রাবিরতি ছিল পাটনায়। পাটনা বিমানবন্দরে অবতরণের সময়, বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় ভেঙে পড়ে। এতে কয়েকটি বাড়ি এবং বিদ্যুতের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় ৬০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান। তদন্তে দেখা যায়, মূলত পাইলটের ভুল এবং বিমান অবতরণের সময় সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে।
৪. চারখি দাদরি সংঘর্ষ ১২ নভেম্বর, ১৯৯৬ : এটি ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। দিল্লির কাছে আকাশে সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৪৭ এবং কাজাখস্তান এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ভুল উচ্চতা নির্দেশনা এবং যোগাযোগ বিভ্রাটের কারণে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। দুইটি বিমানে থাকা ৩৪৯ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন।
এই দুর্ঘটনার পর ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ সমস্ত বাণিজ্যিক বিমানে বাধ্যতামূলকভাবে ট্রাফিক অ্যাভয়ডেন্স সিস্টেম সংযোজনের সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।