সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ‘অপপ্রয়োগ’ ঠেকাতে বেশ কিছু শর্ত পূরণে ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার শেষ দিনেও নির্দেশনা মানেনি ফেইসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রামসহ অন্য মাধ্যমগুলো। এ অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগের এই জনপ্রিয় মাধ্যমগুলো ভারতে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে কি না- সেই প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে দেশটির সংবাদমাধ্যমে। সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে তিন মাস সময় দিয়ে শর্ত পূরণের নির্দেশ দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ২৫ মের মধ্যে এসব শর্ত পূরণ করতে বলা হয়েছিল। ইন্ডিয়ান এঙপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেই সময়সীমা মঙ্গলবারই শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনও শর্ত পূরণ করেনি ফেইসবুক, টুইটার কিংবা ইনস্টাগ্রাম। দেশটির তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, নির্দেশনা না মানলে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু কিংবা বেআইনি কন্টেন্ট তাদের প্ল্যাটফর্মে শেয়ার হলে অপরাধী হিসেবে দায় পড়বে তাদের। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯ ধারায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা পোস্ট নিয়ে আইনি ব্যবস্থা এড়াতে পারে যে কোনো কেম্পানি। তবে শর্ত না মানলে তারা সেই সুযোগ পাবে না। খবর বিডিনিউজের।
কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া নির্দেশনায় তিন স্তরের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপ করে প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মের জন্য অবশ্যই অভিযোগ নিরসন প্রক্রিয়া রাখার কথা বলা হয়েছে। সেজন্য ভারতে তাদের অফিস থাকতে হবে, সেখানে একজন প্রধান নির্বাহী থাকবেন এবং তাকে ভারতের বাসিন্দা হতে হবে। প্রত্যেক প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগের জন্য একজনকে দায়িত্ব দিতে বলা হয়েছে শর্তে, যিনি আইনরক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলবেন। এসব পদে এখনও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি কেন এবং সরকারের শর্ত পালনের বিষয়ে কোম্পানি কী ভাবছে- তা জানতে চেয়ে ফেইসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষকে ইমেইল করা হলেও জবাব মেলেনি বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এঙপ্রেস। আর তাদের প্রশ্নের উত্তরে টুইটার কর্তৃপক্ষ এখন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সদর দপ্তর থেকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এঙপ্রেসকে বলেন, এটা কিভাবে সম্ভব যখন তারা ব্যবসা করবে ভারতে এবং ভারতীয় ব্যবহারকারীদের তথ্য থেকে তারা আয় করবে, অথচ যুক্তরাষ্ট্রে বসে একটি দল পরিস্থিতির একতরফা পর্যালোচনা দেবে? অভিযোগের প্রতিকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষা করা যায় না। কোনো কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পক্ষ থেকে শর্ত পূরণের সময়সীমা বাড়িয়ে ছয় মাস করার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু ভারতের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আগের সময়সীমায় অনড় বলে খবর দিয়েছে ইন্ডিয়ান এঙপ্রেস। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ভারতে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৩ কোটি , ইউটিউব ব্যবহারকারী ৪৪ কোটি ৮০ লাখ, ৪১ কোটি মানুষ ফেইসবুক ব্যবহার করেন, ইনস্টাগ্রামের ২১ কোটি অ্যাকাউন্ট ভারতীয়দের, আর টুইটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা সাড়ে ১৭ কোটির বেশি।