গত ১৫ দিনে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ৬ জন শিশুর। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে ভারতে মধ্যপ্রদেশের ছিন্দোয়ারা জেলায়। প্রাথমিকভাবে একে সাধারণ মৌসুমি জ্বর মনে করা হলেও তদন্তকারীরা এখন ধারণা করছেন, বিষাক্ত ডাইথিলিন গ্লাইকল মিশ্রিত কাশির সিরাপ সেবনই মৃত্যুর কারণ। খবর বিডিনিউজের।
পরিবারসূত্রে বলা হয়েছে, এই শিশুদের প্রত্যেকের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। ভারতীয় পত্রিকা এনডিটিভি জানায়, এই শিশুদের দেহে প্রথমে জ্বর–সর্দি–কাশির মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি সাধারণ কিছু ওষুধ দেন। তারমধ্যে ছিল কাশির সিরাপ।
এই সিরাপ সেবনের পর শিশুরা সুস্থ হয়ে ওঠে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পর আচমকা তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং কিডনিতে সংক্রমণ ছড়ায়। এরপর তড়িঘড়ি তাদেরকে মহারাষ্ট্রর নাগপুরে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হলেও সেখানে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়। এক অভিভাবক বলেন, আমাদের বাচ্চারা এর আগে কখনও এভাবে অসুস্থ হয়নি।
এবার হালকা জ্বর এসেছিল। সিরাপ দেওয়ার পরই তাদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেল। আমরা তাদেরকে বাঁচাতে পারলাম না। ঘটনা নতুন মোড় নেয় তখনই, যখন শিশুদের কিডনি বায়োপসি রিপোর্টে ডাইথিলিন গ্লাইকল নামক বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি ধরা পড়ে। সাধারণত ওষুধ দূষণের সঙ্গে এই রাসায়নিকের যোগ থাকে।
মারা যাওয়া শিশুদের বেশিরভাগকেই কোলড্রিফ এবং নেঙট্রো–ডিএস নামক কাশির সিরাপ দেওয়া হয়েছিল। এই সিরাপ সেবনে শিশু মৃত্যুর ঘটনার পর কালেক্টর শীলেন্দ্র সিং অবিলম্বে গোটা জেলায় এ সিরাপ দুটি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছেন। সেইসঙ্গে চিকিৎসক, ফার্মেসি এবং অভিভাবকদের জন্য জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কালেক্টর সিং বলেন, বায়োপসি রিপোর্টে কিডনি বিকল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আক্রান্ত গ্রামগুলোর পানির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে কোনও সংক্রমণ পাওয়া যায়নি।
তাই এই মৃত্যুর সঙ্গে কাশির সিরাপের যোগ থাকার বিষয়টি নাকচ করা যায় না। ঘটনার ভয়াবহতায় জেলা প্রশাসন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)-এর একটি বিশেষজ্ঞ দলকে ডেকে পাঠিয়েছে। ভোপাল স্বাস্থ্য দপ্তরের দুই সদস্যের একটি দলও পারাসিয়া, নিউটন চিকলি ও কাছের গ্রামগুলোতে পৌঁছেছে। কর্মকর্তারা বিভিন্ন পরিবারের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত অন্য শিশুদের চিহ্নিত করতে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা চালাচ্ছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সিএমও) নরেশ গোনারে জানান, গত ২৪ অগাস্ট প্রথম সন্দেহজনক ঘটনা রিপোর্ট করা হয় এবং প্রথম মৃত্যু ঘটে ৭ সেপ্টেম্বর।
তিনি বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রস্রাব বন্ধ হওয়া এবং কিডনি জটিলতার আরও ঘটনা সামনে এসেছে। এটি ভাইরাস সংক্রমণের সংবেদনশীল সময় হলেও এতগুলো শিশুর হঠাৎ কিডনি বিকল হওয়া আরও বিপজ্জনক কোনও কিছুর দিকেই ইঙ্গিত করে। তদন্তের জন্য আইসিএমআর দল রক্ত ও ওষুধের নমুনা পুনের ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটে আরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। শোকার্ত পরিবারগুলো এমন ঘটনার জবাব এবং ন্যায়বিচার দাবি করেছে। ওদিকে, প্রশাসন ক্রমবর্ধমান চাপে পড়েছে।