বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের জলসীমা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ৭৯ নাবিক ও জেলেসহ দুটি ফিশিং ট্রলারের সবাইকে জাহাজে রাখা হয়েছে। গতকাল জেলে ও নাবিকদের উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ এলাকায় একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছে। গতকাল বিকেলে নাবিকদের উদ্বৃতি দিয়ে জাহাজ দুইটির মালিকপক্ষ বলেছে, সকল নাবিকই সুস্থ আছেন। তারা জাহাজেই অবস্থান করছেন। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম বাংলাদেশী কোনো ফিশিং জাহাজ ভারতীয় কোস্টগার্ড ধরে নিয়ে গেলো বলেও সূত্র জানিয়েছে। গতকাল সকালে ভারতীয় কোস্টগার্ড অবৈধ অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ভারতীয় জলসীমায় মাছ শিকারের অপরাধে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে।
সূত্র জানায়, গত সোমবার দুপুরের দিকে বাংলাদেশের জলসীমায় খুলনার হিরণ পয়েন্ট এলাকায় মাছ শিকারে নিয়োজিত বাংলাদেশী ফিশিং জাহাজ এফভি মেঘনা–৫ ও এফভি লায়লা–২ কে ৭৯ জন নাবিকসহ ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড। প্রথমে তাদেরকে উড়িষ্যা উপকূলে একটি জেটিতে নোঙর করানো হয়। পরে জাহাজ দুইটির প্রতিটিতে দুইজন করে নাবিককে রেখে বাকি ৭৫জনকে প্যারা দ্বীপের কাছে একটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রিপোর্ট করার পর জেলে ও নাবিকদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। পরে বিকেলে তাদেরকে আবারো জাহাজে তুলে দেয়া হয়। জাহাজ দুইটি উড়িষ্যা এলাকায় একটি জেটিতে নোঙর করে রাখা হয়েছে।
এফভি মেঘনা–৫ জাহাজটির মালিক চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড এবং এফভি লায়লার মালিক প্রতিষ্ঠান এস আর ফিশিং।
এফভি মেঘনা–৫ জাহাজে নাবিক ও জেলে মিলে মোট ৩৭ জন এবং এফভি লায়লা–২ জাহাজে নাবিক ও জেলেসহ ৪২ জন রয়েছেন।
গতকাল সিএন্ডএ এগ্রোর নির্বাহী পরিচালক সুমন সেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নাবিকেরা সকলেই সুস্থ আছেন। গতকাল বিকেল ৫টার সময় জাহাজের ক্যাপ্টেন রাহুল বিশ্বাসের সাথে কথা হয়েছে জানিয়ে সুমন সেন বলেন, নাবিক এবং জেলে সকলেই ভালো আছেন। তাদেরকে ভারতীয় কোস্টগার্ড আশ্বস্ত করেছে যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী বা কোস্টগার্ড যদি ভারতীয় কোস্টগার্ডের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের জলসীমার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।
ইতোমধ্যে তাদের উদ্ধারের জন্য জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মৎস্য মন্ত্রণালয় ও নৌ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। নৌ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারে সরকারের পক্ষ থেকে কাজ চলছে।
বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজালাল জানিয়েছেন, নাবিকদের সাথে জাহাজের মালিকপক্ষের যোগাযোগ রয়েছে। আমরা সরকারের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। নাবিক ও জেলেদের উদ্ধার করার আবেদন করেছি। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ নৌবাহিনী প্রধান এবং কোস্টগার্ড প্রধানের সাথেও কথা বলেছেন। আজ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং জাহাজ মালিকদের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি টিম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে সরাসরি কথা বলে আসার চেষ্টা করবে।
বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি এবং নাবিক ও জেলেসহ জাহাজ দুইটি উদ্ধারের চেষ্টা করছি বলেও মোহাম্মদ শাহজালাল দৈনিক আজাদীকে জানান।
নৌ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মাকসুদ আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগ থেকে নাবিক ও জেলেদের উদ্ধারে কাজ চলছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগে রয়েছি।’ প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘সাগরের মাঝে কোনো সীমানা নেই। জিপিএসের মাধ্যমে সীমানা চিহ্নিত করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো জাহাজ যদি অপর দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে তখন সাবধান করে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এভাবে আটক করা এবারই প্রথম।’
দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনোদিনই কোনো বাংলাদেশী জাহাজ ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করার ঘটনা ঘটেনি বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে।
জাহাজ দুইটির মালিকদের পক্ষে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জাহাজগুলো কখনোই ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করে না। এরা সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে মাছ শিকার করে। যেটি বাংলাদেশেরই জলসীমা। অপরদিকে ভারতীয় বহু ট্রলার সুযোগ পেলেই আমাদের ভিতরে চলে আছে। সম্প্রতি এই ধরনের ছোট দুইটি ট্রলার বাংলাদেশ আটক করেছিল।
ধরে নিয়ে যাওয়া জাহাজগুলোর দাম অনেক এবং এগুলো সর্বাধুনিক ফিশিং প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ বলে উল্লেখ করে জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক একটি জাহাজের দাম অন্তত ২৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ২৬৪টি ফিশিং জাহাজ গভীর সাগরে মাছ শিকারে নিয়োজিত রয়েছে।