ভারতের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপে ধরে নিয়ে যাওয়া ৭৮ নাবিকদের ফিরিয়ে আনার আশা করছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন বলেছেন, এরই মধ্যে এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এদিন সন্ধ্যায় ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা থেকে ৭৮ নাবিকসহ মাছ ধরার দুটি নৌযানকে ভারতের উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা ভারতের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। আমাদের যারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে আছে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য। এবং আমাদের প্রত্যাশা আছে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে পারব।’ এদিকে সীমান্তে আরাকান বাহিনীর সঙ্গে মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সে দিকেও বাংলাদেশ বিশেষ নজর রাখছে বলে বিফ্রিংয়ে তুলে ধরেন পররাষ্ট্র সচিব।
সাগর থেকে মাছ ধরার নৌযান থেকে এসব নাবিকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার এ ঘটনা বুধবার সকালে দুই নৌযানের নাবিকদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষের কথা হলে জানা যায়। এছাড়া ভারতের কোস্টগার্ড ফেইসবুকে আটক নাবিকসহ নৌযান দুটির ছবিও পোস্ট করে। খুলনার হিরণ পয়েন্ট এলাকার ভারতের জলসীমার কাছ থেকে সোমবার দুপুরে এফভি মেঘনা–৫ ও এফভি লায়লা–২ নামের মাছ ধরা জাহাজ দুটি নাবিকসহ ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এফভি মেঘনা–৫ এর মালিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএ অ্যাগ্রো লিমিটেড। এফভি লায়লা–২ এর মালিক প্রতিষ্ঠান এস আর ফিশিং। নৌযান দুটি খুলনা বেল্টের হিরণ পয়েন্ট এলাকায় গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে ছিল। জেলে ও নাবিক মিলিয়ে মেঘনাতে ৩৭ জন এবং লায়লাতে ৪১ জন ছিল। মঙ্গলবার লায়লা–২ এ ৪২ জন নাবিক থাকার কথা বলা হলেও মাছ ধরার ওই নৌযান রওনা দেওয়ার সময় একজন অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি।
নৌযান দুটি ভারতের কোস্টগার্ডের হাতে আটক হওয়ার পর মালিকপক্ষ সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে অবহিত করেছে। এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া দেশটির জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) দাবি এবং এখানে মিয়ানমারের কর্তৃত্ব না থাকার বিষয়টি কীভাবে দেখছে বাংলাদেশ, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এটা আপনারা জানেন যে মিয়ানমারে যা হচ্ছে এটা একটি ইভলভিং সিচুয়েশন। আপনাকে এটা বলতে পারি যে, এই সিচুয়েশন আমরা আমাদের নজরে রাখছি।’ এছাড়া আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জাতির স্বার্থে যা করণীয় সেটাই করব। এবং তার লক্ষ্য হবে মূলত বাংলাদেশে অবস্থানরত ১ দশমিক ২ মিলিয়ন যে ফরসিভলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমারিয়ান আছে, তাদের প্রত্যাবর্তন।’
কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে লড়াইয়ের পর রোববার সকালে মংডু শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে আরাকান আর্মি। সোমবার আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হয়। দেশটিতে উত্তেজনাকর এ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন নৌপথসহ এবার নাফ নদীর বাংলাদেশ অংশে সব নৌযান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার সকাল থেকে এ নৌপথ দিয়ে কোনো ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করেনি। একই সঙ্গে নাফ নদীর বাংলাদেশের জলসীমায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে নাফ নদী দিয়ে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কক্সবাজার থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে পর্যটকবাহী জাহাজ সেন্ট মার্টিন যেতে বাধা নেই।