ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে কী ক্ষতি হবে সেই প্রশ্ন সংসদে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতকে এই সুবিধা দিয়ে রাস্তার ভাড়া হিসেবে কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা আরো বলেছেন, আওয়ামী লীগ দেশকে বিক্রি করে না বরং খালেদা জিয়া, এরশাদ ও জিয়াউর রহমান সেটা করেছে। কারা দেশ বিক্রি করেছে? এটা খালেদা জিয়া, এরশাদ ও জিয়াউর রহমান করেছে। তারা দেশ বিক্রি করেছে। আওয়ামী লীগ দেশ বিক্রি করে না। এই বিষয়ে, তিনি এই ত্রয়ীর আমলের বেশ কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করেন যার মধ্যে রয়েছে ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার দ্বারা ভারতের কাছে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির জন্য মুচলেকা প্রদান। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন। খবর বাসস ও বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফরে ১০টি বিষয়ে সমঝোতা হলেও সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রেল কানেকটিভিটি। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে ভারতের ট্রেন দেশটির এক অংশ থেকে আরেক অংশে পণ্য বা যাত্রী পরিবহন করবে। আবার বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের মাটি ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটান যাবে, এমন একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দেশ। এরপর থেকে দেশে চলছে রাজনৈতিক বিতর্ক। বিএনপি এর বিরোধিতা করে বলছে, এতে দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব নষ্ট হবে, দেশের নিরাপত্তা পড়বে হুমকিতে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ট্রানজিট তো অলরেডি দেওয়া আছে। ত্রিপুরা থেকে বাস ঢাকা হয়ে কলকাতা যাচ্ছে। সেখানে ক্ষতিটা কী হচ্ছে? বরং আমরা রাস্তার ভাড়া পাচ্ছি। সুবিধা পাচ্ছে দেশের মানুষ। আমরা কিছু অর্থ উপার্জন করছি।
আসামের নুমালিগড় হয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পার্বতীপুর ডিপোতে তেল আসছে। সেটা নাটোর পর্যন্ত আনব। ক্ষতিটা কী হয়েছে? বরং আমরা তেলটা সস্তায় কিনতে পারছি। বাংলাদেশ কেন বিচ্ছিন্ন থাকবে এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ভূটান থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত একটি রাস্তা যাচ্ছে। সেই রাস্তাটা যাচ্ছে বাংলাদেশকে বাইপাস করে। বিশ্বব্যাপী রোড হচ্ছে সেটা থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ। কেন বিচ্ছিন্ন থাকব? ভারত চাচ্ছিল এ রাস্তাটা ভুটান থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারত ও মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড যাবে। এটা হলে আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ব্যবসা–বাণিজ্যে কত সুবিধা হত। সেটাও খালেদা জিয়া নাকচ করে দিয়েছিল। আমরা চারদিকে বন্ধ হয়ে থাকব। এই হল তাদের (বিএনপির) অবস্থা।
আমরা নিজেদের দরজা বন্ধ রাখতে পারি না : এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নেপাল, ভুটানের সঙ্গে ট্রানজিট পেয়েছি ভারতের। এটা একটা (ভারত) দেশ না। এটা আঞ্চলিক ট্রানজিট ও যোগাযোগ সুবিধার জন্য এটা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এত বেশি কথা হচ্ছে তাই আমাদের এই কথাগুলো বলা উচিত। আজকে পৃথিবীটা হচ্ছে গ্লোবাল ভিলেজ। একে অপরের উপর নির্ভরশীল। ব্যবসা–বাণিজ্য যোগাযোগের দরজা বন্ধ করে থাকা যায় না।
মিয়ানমার থেকে ভারতে গ্যাস যাওয়ার পাইপলাইন অনুমোদন না দেওয়ায় সর্বনাশ হয়েছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মিয়ানমারের গ্যাসক্ষেত্রে ভারত, চীন, জাপানের বিনিয়োগ ছিল। সেই গ্যাসটা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত যাবে, নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা একটা ভাগ নেব। এটা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাসের কোনো অভাব হত না। খালেদা জিয়া সেটা হতে দেয়নি। কেন দেয়নি? আজকে সেই গ্যাস নিয়ে গেছে চীন। আর কোনো দেশ তো নিতে পারছে না। অথচ আমরা সেটা থেকে পেতাম। আমি সরকারে আসার পর অনেক চেষ্টা করেছিলাম, একটু গ্যাস আনতে পারি কি না। কিন্তু পারলাম না। নেপাল, ভুটান, ভারত ও বাংলাদেশ মিলে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে ট্রানজিটের ব্যবস্থা। নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ কেনা শুরু করছি। গ্রিড লাইন করা.. আমরা সেই চুক্তিও করেছি এবং কার্যকরও করছি।
দেশ বিক্রি ভাঙা রেকর্ডের মত : ভারত সফর নিয়ে বিরোধী দলগুলোর সমালোচনারও জবাব দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি দেখতে পাচ্ছি কিছু লোক আমার ভারত সফর নিয়ে নানা রকম কথা তুলেছে। ১৯৮১ সালে ছয় বছর পরে দেশে ফিরে আসার পর এই একই কথা শুনতে হয়েছে (ভারতের কাছে দেশ বিক্রি)। এখন জানি না এখন কেন সেই ভাঙা রেকর্ড বাজাতে শুরু করল। ৪০টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশ অধিকার দিয়ে আমাদের বাজারটাকে ভারতীয় পণ্যের বাজারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। ১৯৮০ সালে গ্যাস বিক্রির চুক্তিও করে আসে।
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের ভারত সফরে দেশের জন্য কোনো কিছুই আনতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পরে ভারত–বাংলাদেশের ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়, তিন বিঘা করিডোর উন্মুক্তসহ বিভিন্ন অর্জনের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
কারও গলা চিপে ধরছি না : আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরেই গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষের হাতে ফিরে এসেছে বলেও দাবি করেন শেখ হাসিনা। বলেন, অত্যাচার–নির্যাতনের কথা শুনি। আমাদের কোনো নেতা কর্মী বাকি ছিল নির্যাতনের হাত থেকে জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে? সবাই জনসভা করছে, মিছিল করছে, বক্তৃতা করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা রেডিও, টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দিয়েছি বেসরকারিভাবে, ইচ্ছামত টক শো করছি। আমরা তো কারও মুখ চেপে ধরছি না, গলা চিপেও ধরছি না। যে যা পারছে, বলতে পারে বলুক। আমরা রাষ্ট্র চালাচ্ছি জনগণের কল্যাণে কাজ করছি।