নিম্নমানের চাল সরবরাহ দেয়ায় ভারতীয় একটি জাহাজের চাল খালাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে আমদানিকৃত চালের চালানটি ভারতের নেকফ ইন্ডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ দেয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে বন্দরের ৩ নম্বর বার্থে খালাসকালে ঘোলাটে এবং ভাঙাসহ অত্যন্ত নিম্নমানের চাল পাওয়া যায়। খাদ্য বিভাগ এই চাল গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে খালাস বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। এমভি বিএনসি আলফা নামের ওই জাহাজ থেকে ইতোমধ্যে ৫৬৫ টন চালান খালাস করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১০টি গুদামে পাঠানো হয়েছে। এসব চালের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে তা ফেরত নেয়া হবে বলে সরবরাহকারীর পক্ষ থেকে অঙ্গীকারপত্র জমা দেয়া হয়েছে। জাহাজটি চালসহ আজ শনিবার সকালে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই চাল গ্রহণ করা সম্ভব নয় বলেও খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহকারীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
খাদ্য বিভাগ এবং খাদ্য পরিবহন ঠিকাদার সূত্র জানিয়েছে, ভারত থেকে সরকারিভাবে ১ লাখ ৫২ হাজার বস্তা ভর্তি ৭ হাজার ৬শ টন সেদ্ধ চাল আমদানি করা হয়। ভারতের নেকফ ইন্ডিয়া লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চালগুলো সরবরাহ করে। গত সপ্তাহে চালবাহী জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। যৌথ টিমের নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষাসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বুধবার বন্দরের তিন নম্বর বার্থে জাহাজটি নোঙর করে। বার্থিংয়ের পরপরই জাহাজটি থেকে চাল খালাস শুরু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত জাহাজটি থেকে ৫৬৫ টন বা ১১ হাজার ৩শ বস্তা চাল খালাস করা হয়। এসব চাল দেওয়ান হাট সিএসডিতে ৭৫ টন, হালিশহর সিএসডিতে ১৫ টন, সিলেট সিএসডিতে ৯০ টন, কুমিল্লার চকবাজার গুদামে ৬০ টন, চাঁদপুরের মতলবে ৪৫ টন, বরইছড়িতে ১৫ টন, জয়দেবপুরে ৪৫ টন, নারায়ণগঞ্জে ৩০ টন এবং তেজগাঁও সিএসডিতে ১৯০ টন চাল সরবরাহ দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে চাল খালাসকালে নিম্নমানের চাল দেখা যায়। পরবর্তী বস্তা খুলে দেখা যায় চালের মান অত্যন্ত নিম্ন। এই সময় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা চাল গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ করে দেন। সরবরাহকারীর পক্ষ থেকে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে চালগুলো সরকারকে গছানোর চেষ্টা করা হয় বলেও সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তিন নম্বর বার্থের একাধিক কর্মকর্তা চালবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ করে দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। খাদ্য বিভাগের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নিম্ন মানের চালের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তারা বলেন, যে চালগুলো খালাস হয়েছে সেগুলো গুদামে পৌঁছানোর পর যদি পচা পাওয়া যায় তাহলে সরবরাহকারী পাল্টে দেবে বলে অঙ্গিকারপত্র দিয়েছে। বিষয়টি খাদ্য বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ে জানানো হয়েছে বলেও তারা জানান।
গতকালও জাহাজটি বন্দরের তিন নম্বর বার্থে অবস্থান করছিল। চালগুলো গ্রহণ করানোর জন্য নানাভাবে তোড়জোড় করা হয়। কিন্তু শেষতক খাদ্য বিভাগ চাল গ্রহণে সম্মত হয়নি। চালগুলো ভারতে ফেরত নেয়ার জন্য সরবরাহকারীর প্রতিনিধিকে বলে দেয়া হয়েছে। আজ (শনিবার) সকালে বিএমসি আলফা নামের চালবোঝাই জাহাজটি ৩ নম্বর বার্থ থেকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের সিএমএস (সরবরাহ এবং সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক) আবদুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নিম্নমানের চাল খালাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ডিজি মহোদয়কে ঘটনা জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমরা পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, জাহাজটি আজ বার্থ থেকে বহির্নোঙরে চলে যেতে বলা হয়েছে।