চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ শুরু হলেও প্রাক্কলিত চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহক না পাওয়ায় পুরোদমে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ২ হাজার কোটি টাকার সরকারি ও বিদেশি ঋণে বোয়ালখালীর জ্যৈষ্ঠপুরায় ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি থেকে দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। ঈদের আগে এই প্রকল্পটির উৎপাদন শুরু হলেও শুধুমাত্র চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত পানি নিতে রাজি হয়নি। দীর্ঘদিন পর উৎপাদনের পরও পানির চাহিদা থাকায় পুরোদমে চালু করা যাচ্ছেনা প্রকল্পটি। এর ফলে এই প্রকল্পের পানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে ওয়াসা। ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম আজাদীকে বলেন, ঈদের আগে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে।
এখন শুধুমাত্র চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজারে (সিইউএফএল) পানি সরবরাহ করছি। আর কোনো প্রতিষ্ঠানে এখনো সরবরাহ শুরু হয়নি।
চায়না ইপিজেডের সাথে কথা হয়েছে। তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হবে। তারা এই বছর প্রকল্পের কাজ শুরু করবে। কাজ শুরু করলে আমাদের থেকে পানি লাগবে। প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে ৬ বছর পর প্রতিদিন চায়না ইপিজেডে দৈনিক সাড়ে ৩ কোটি লিটার পানি লাগবে। ড্যাপ (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা) তারা পানি নিতে রাজি হয়েছে। এখন তারা সংযোগের ফি দিলে আমরা সংযোগ দিয়ে দেবো।
জানা গেছে, ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের শুরুতেই আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ার দেশী–বিদেশি ছোট–বড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার। শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে এই প্রকল্প থেকে পানি নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। তখন কাফকো, সিইউএফএল, ড্যাপ, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোনসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পানি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। এখন প্রকল্পের কাজ শেষে সংযোগ নেয়ার জন্য চিঠি দিলে এখন শুধুমাত্র সিইউএফএল ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুহম্মদ মাহবুবুল আলম।
ওয়াসা থেকে জানা গেছে, এই প্রকল্পের অধীনে বাণিজ্যিক গ্রাহক ছাড়াও এ প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার আবাসিক গ্রাহককে সংযোগ দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত সংযোগের জন্য আবেদন করেছে ১২০০ গ্রাহক। এর মধ্যে পটিয়ায় ৮০০ এবং বোয়ালখালীতে ১০০ গ্রাহকের বাসাবাড়িতে সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট গ্রাহকদের সংযোগের কাজ চলছে।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে জটিলতার কারণে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার, ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংক এবং ২০ কোটি টাকা চট্টগ্রাম ওয়াসার নিজস্ব তহবিল থেকে।