ভাঙছে মাতামুহুরীর দুই তীর বিলীন হচ্ছে বসতি-স্থাপনা

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ৯ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

একটানা কয়েকদিনের মাঝারি ও ভারী বর্ষণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পার্বত্য অববাহিকার মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসছে উজানের ঢলের পানি। তবে এলাকায় বন্যা দেখা না দিলেও আগে থেকে তলদেশ ভরাট হয়ে থাকায় উজানের পানিতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মাতামুহুরীর দুই তীরের ভাঙন। এতে নদী বিধৌত কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহর ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শত শত পরিবার বাস্তুহারা হয়ে পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ দিনে কম করে হলেও উপজেলার বমু বিলছড়ি, সুরাজপুরমানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বিএমচর, কোনাখালী ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চরম হুমকির মুখে রয়েছে চকরিয়া পৌরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে নির্মিত পৌরশহর রক্ষা বাঁধ তথা এক নম্বর গাইড বাঁধ, অসংখ্য সড়ক, বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা, কবরস্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও।

শুধুমাত্র চকরিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নদী তীরে ঢুঁ মেরে দেখা গেছে, মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাত সেইসাথে উজানের নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তীব্রতায় চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধ এবং পাশের মজিদিয়া মাদরাসা এলাকা, মামাভাগিনার মাজার, নামার চিরিঙ্গা, বাঁশঘাট ও স্টেশনপাড়ার অনেক পরিবারের বসতবাড়ি নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চিরিঙ্গা মাতামুহুরী ব্রিজের পূর্বাংশের বাঁধাখাল লাগোয়া অন্তত ১২টি পরিবারের বসতবাড়ি। বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে এসব এলাকার শতাধিক বসতবাড়ি। এই অবস্থায় বাস্তুভিটে হারিয়ে ওই এলাকার নিঃস্ব পরিবারগুলোতে করুণ অবস্থা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে বহু পরিবার।

চকরিয়া পৌরসভার সদ্য সাবেক প্যানেল মেয়র ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্দা মুজিবুল হক মুজিব দৈনিক আজাদীকে বলেন, মাতামুহুরী নদী তীরে বসবাসকারী শত শত পরিবার এখন ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অন্তত ১২টি বসতবাড়ি। আরও বহু বসতবাড়ি বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু সরকারের কোনো সংস্থা নদীর ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। নদী তীরের বসবাসকারী আতঙ্কিত বেশ কয়েকজন বাসিন্দার ভাষ্যচিরিঙ্গা মাতামুহুরী ব্রিজের পুর্বাংশের বাঁধা খাল লাগোয়া বেশকিছু বসতভিটার অর্ধেকাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকিটাও বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে। তার ওপর অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টিপাত। পাশের হাজিয়ান বিলের বিপুল পরিমাণ কৃষিজমিও নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরের ফসলি জমিতেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাজিয়ান বিলের কৃষি জমির একটি বড় অংশ নদীতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলামের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ইতোমধ্যে চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, বিএমচর ও কোনাখালী ইউনিয়নের অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে মাতামুহুরী নদীর দুই তীর রক্ষায় বালু ও সিমেন্ট মিশ্রিত জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।

মাতামুহুরী নদীর ভাঙন রোধকল্পে পাউবো কী করছে এমন প্রশ্নে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মো. জামাল দৈনিক আজাদীকে মোরশেদ বলেন, পাহাড়ি ঢলের তীব্রতায় চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাতামুহুরী নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে জরুরীভিত্তিতে নদীর তীরের ভাঙন রোধকল্পে সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কঙবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনস্থ চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়ায় এবং আশপাশের এলাকার বসতবাড়ি রক্ষায় প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পর ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে অনুমোদন পরবর্তী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে। তবে এখনো চাহিদাপত্রের বিপরীতে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

অন্যদিকে চিরিঙ্গা মাতামুহুরী ব্রিজের পূর্বপাশে বাঁধা খাল লাগোয়া গ্রামের বাড়িঘর ও হাজিয়ান বিলের কৃষিজমি রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছেন বলে নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমার অধীনস্থ চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর ভাঙন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ডাম্পিং কিংবা সিসি ব্লক বসানোর জন্য ৬০০ মিটার কাজের বিপরীতে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে পাউবোর কেন্দ্রীয় দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি এই কাজের বরাদ্দ নিশ্চিত করতে ঢাকার সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, চাহিদার বিপরীতে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই আমরা ওই এলাকায় কাজ শুরু করব। এজন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীর্ণ পরিবেশ ও চিকিৎসক সংকট, সেবা বন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ফারুকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা