‘ভয়ংকর সুন্দর’ রিসাং ঝরনা

বৃষ্টি পেয়ে ফিরেছে প্রাণ, পর্যটকদের ভিড়

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৮:২১ পূর্বাহ্ণ

ভরা বর্ষায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে পাহাড়ি ঝরনা। খাগড়াছড়ির রিসাং, তৈদুছড়া, তৈছামাসহ জেলার ১০টি ঝরনা নিয়মিত বৃষ্টির পানি পেয়ে যেন হারানো যৌবন ফিরে পেয়েছে। অন্তত ৭ মাস ধরে ঝরনাগুলো পানির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে এসেছিল। গতকাল শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান ও জনপ্রিয় ঝরনা রিসাং ঝরনায় গিয়ে দেখা যায়, ঝরনার আদিম ও অকৃত্রিম রূপ দেখে অভিভূত পর্যটকরা। বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা স্থানীয়দের কাছে ‘তেরাং তৈকালাই’ নামে পরিচিত এ ঝরনার রূপ দেখতে ছুটে এসেছেন অনেকে। পাহাড়ি ছড়া বেয়ে নেমে আসা পানির প্রবাহে মুগ্ধ তারা।

টানা বর্ষণে রিসাং ঝরনার এই রূপ দেখে অভিভূত স্থানীয় পর্যটক মো. আরাফাত। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে বন্ধুদের নিয়ে রিসাং ঝরনায় এসেছি। ঝরনার এমন রূপ আগে কখনো দেখি নাই। প্রচুর পানির প্রবাহ। এতোদিন ঝরনায় তেমন পানি ছিল না। অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে গেছে। টানা বৃষ্টির কারণে এখন প্রতিটি ঝরনায় প্রচুর পানি। রিসাং ঝরনায় এই রূপ দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে। খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে রিসাং ঝরনা। সারা বছরই কমবেশি এখানে পর্যটক সমাগম থাকে। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত সাত মাসের বেশি সময় ধরে রিসাংসহ অন্যান্য ঝরনাগুলো পানি প্রবাহ একেবারেই কমে এসেছে। বৃষ্টি হওয়ায় প্রতিটি ঝরনায় পানির স্রোতধারা বয়ে যাচ্ছে। ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সালেহ উদ্দিন বলেন, খাগড়াছড়িতে বেড়াতে এসেছি। আসার পর থেকে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষায় পাহাড় খুব সুন্দর। তাই এই সময়ে ভ্রমণে আসলাম। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ঝরনা দেখে। রিসাং ঝরনায় এখন প্রচুর পানি। যাতায়াতে কিছুটা কষ্ট হলেও ঝরনাগুলো এখন ভয়ংকর সুন্দর। টানা বৃষ্টিতে না আসলে এই সৌন্দর্য অনেকেই মিস করবে।

খাগড়াছড়িতে বেড়াতে আসা পর্যটক মারুফ হোসেন ও সায়েম আজাদ বলেন, সাজেক থেকে আজকে ফিরলাম। বিকেলে রিসাং ঝরনা আর আলুটিলায় ঘুরেছি। আমরা ভাগ্যবান কারণে বৃষ্টি হওয়ায় ঝরনায় প্রচুর পানির প্রবাহ। বৃষ্টিতে ভিজে ঝরনার সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। বর্ষায় পাহাড় সুন্দর। এছাড়া ঝরনার এমন রূপ দেখতে পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের। যারা এই সময়ে পাহাড়ে আসবে তারা ঝরনা এমন রূপ দেখে মুগ্ধ হবে।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়িতে ছোট বড় ১০টি ঝরনা রয়েছে। এসব ঝরনাকে কেন্দ্র করে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সময়ে রিসাং ঝরনায় বিপুল পরিমাণ পর্যটক থাকে। তবে যাতায়াত সুবিধা না থাকার কারণে তৈদুছড়া, শিলাছড়িসহ বিভিন্ন ঝরনায় দর্শনাথীরা যেতে পারে না। এসব এলাকায় সড়ক নির্মিত হলে পর্যটক সমাগম আরো বাড়বে। স্থানীয় পর্যটন অর্থনীতি আরো সমৃদ্ধ হবে।

খাগড়াছড়ি টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ হাসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, রিসাং ঝরনায় দর্শনার্থীদের আমরা নিরাপত্তা প্রদান করি। ছুটির দিনগুলিতে আমাদের টিম টহল দেয়। তবে দুর্গম এলাকাগুলো যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকার কারণে টহল দেয়া সম্ভব হয় না। তবে কোনো পর্যটক যদি প্রত্যন্ত এলাকার ঝরনায় গিয়ে সমস্যায় পরে সেক্ষেত্রে তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে আমরা সহায়তা দিতে পারব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজমিয়তুল ফালাহ’য় শাহাদাতে কারবালা মাহফিল কাল শুরু
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় দুর্ঘটনায় ইমাম নিহত, আহত ৫